অ্যালকোহলে যত ক্ষতি

অ্যালকোহলে যত ক্ষতি

ধর্মীয় বা সামাজিক বিধিবিধানের বাইরেও স্বাস্থ্যের ওপর মদ বা অন্য অ্যালকোহলসমৃদ্ধ পানীয়ের ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বেশি অ্যালকোহল পান করলে হ্যাংওভার হয়। শরীর দুর্বল লাগে। চেহারা-সুরতেও পড়ে বাজে ছাপ। তবে এটা কেবল অ্যালকোহলপানের পরের দিনের সকালের অবস্থা।
 

কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর এর কী প্রভাব পড়ে? সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফল বলছে, শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বেশ ক্ষতি করে অ্যালকোহল। প্রাণঘাতী ব্যাধি ক্যানসারের বড় কারণ এটি। এ ছাড়া প্রজননক্ষমতা হ্রাস, জন্মগত ত্রুটি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাসসহ বহু ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে অ্যালকোহল।

অতিরিক্ত অ্যালকোহলপানে দীর্ঘ মেয়াদে স্তন ক্যানসার, মুখের ক্যানসার, হূদেরাগ, স্ট্রোক ও যকৃতের (লিভার) সিরোসিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অ্যালকোহল ও যকৃতের সমস্যার ব্যাপারটি কমবেশি অনেকেই জানেন। বিজ্ঞানীরা শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপরও এর প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা করছেন।

ক্যানসার রিসার্চ ইউকে নামের যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান এ বছর তাদের একটি গবেষণার ফল চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী বিএমজেতে প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, অ্যালকোহলের কারণে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ১৩ হাজার মানুষের ক্যানসার হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দিনে প্রতি ১০ গ্রাম বাড়তি অ্যালকোহলের জন্য স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৭ থেকে ১২ শতাংশ বাড়ে। অন্ত্র ক্যানসারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অ্যালকোহল পান সপ্তাহে ১০০ গ্রাম বাড়ালে এ রোগের ঝুঁকি ১৯ শতাংশ বাড়বে।

মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষক কে জি প্যাটেল বলেন, অ্যালকোহল ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, যে পর্যন্ত শরীরের ডিএনএতে পরিবর্তন না ঘটে, সে পর্যন্ত কারও ক্যানসার হবে না। মদ্যপান করলে অ্যালকোহল শরীরে ঢুকে অ্যাসিটালডিহাইডে পরিণত হয়। এটি একটি বিষাক্ত উপাদান এবং তা ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে শরীরকে ক্যানসারের পথে ঠেলে দেয়।

ইমিউনোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যালকোহল শরীরের ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বাড়তি অ্যালকোহলপানে মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্মৃতিশক্তি। কমে যেতে পারে প্রজননক্ষমতা। গর্ভাবস্থায় কোনো নারী মাত্র একবার অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলেও তাঁর সন্তানের জিনের কাঠামোয় স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এমনকি অল্প মাত্রায় পান করলেও নারীদের সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে বেশি পান করলে পুরুষের শুক্রাণুর মান ও পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন জেনারেল হাসপাতালের যকৃত বিভাগের বিশেষজ্ঞ নিক শেরন বলেন, যুক্তরাজ্যে যকৃত ক্যানসারে মৃত্যুর হার গত ২০-৩০ বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ৮০ ভাগের মৃত্যু হয়েছে শুধু অ্যালকোহলের কারণে।

ইতিমধ্যেই হূৎপিণ্ডসংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত অ্যালকোহল পানের ফলে হূদেরাগের ঝুঁকি কমে। কেননা এতে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হয়। দিনে তিন মাত্রার বেশি অ্যালকোহল পান করলে হূৎপিণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
 

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: