আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

প্রফেসর ড. ইউসুফ আল কারযাভী একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, পন্ডিত ও কুশলী। ইসলামী জ্ঞানে তার গভীরতা এবং সমসাময়িক বিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের কি ভূমিকা হবে সে বিষয়ে সুচিন্তিত মতামতের জন্য তিনি সারা বিশ্বে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। তিনি ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার একজন প্রবক্তা। ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সংলাপের উপর তিনি সবসময় বিশেষ গুরুত্ব আরপ করেন।
বিখ্যাত মিশরীয় পন্ডিত ড. কারযাভীর জন্ম ১৯২৬ সালে। দশবছর বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ করেন এবং কোরআন তেলাওয়াতের নীতিমালা, তাজভীদের উপর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তিনি আল আজহারেই লেখাপড়া করেন। ১৯৭৩ সালে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুল আল দ্বীন অনুষদ হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. কারযাভী আল আযহার ইন্সটিটিউট মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ার সময়ই তার প্রতিভার স্বাক্ষর হিসাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে আল্লামা বা মহান পন্ডিত খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৫৮ সালে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উপর ডিপ্লোমা করেন। এর আগে তিনি আরবি ভাষা অনুষদ থেকে শিক্ষকতার সনদ পান।
ড. কারযাভী মিশর সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বোর্ড অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স এর একজন সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি আলজেরিয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ইসলামিক সায়েন্টিফিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেদ্দাস্থ ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) ফিকাহ একাডেমী, মক্কাভিত্তিক রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর ফিকাহ একাডেমী, রয়াল একাডেমী ফর ইসলামিক কালচার এন্ড রিসার্চ জর্ডান, ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার অক্সফোর্ড এর সদস্য। ইউরোপিয়ানাউন্সিল ফর ফতোয়া এন্ড রিসার্চ এর প্রেসিডেন্ট এবং কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডীন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্নাহ ও সিরাহ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক। তিনি বাংলাদেশের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য।
তার এ পর্যন্ত ৪২টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ইংরাজী, তুর্কি, ফার্সী, উর্দু, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক ভাষায় তার বই অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত মোট ছযটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে 'ইসলামে হালাল-হারামের বিধান', 'ইসলামের যাকাত বিধান', 'ইসলামী শরিয়তের বাস্তবায়ন' বই তিনটি খায়রুন প্রকাশনী, ঢাকা প্রকাশ করেছে। এছাড়া সৃজন প্রকাশনী লিমিটেড, ঢাকা 'ইসলামী পুনর্জাগরণঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা' এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অন দ্যা কুরআন এন্ড সুন্নাহ, চট্টগ্রাম 'দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম' প্রকাশ করেছে।
তিনি একজন সনামধন্য কবি। নিজস্ব কাব্য বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি আরব বিশ্বে সুপরিচিত। বর্তমানে তিনি আল জাজিরাহ টেলিভিশনে একটি সরাসরি সম্প্রচারিত সাপ্তাহিক আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক স্রোতা এ অনুষ্ঠান উপভোগ করে।
বাল্যকাল থেকেই তিনি ইসলামের একজন সক্রিয় কর্মী। এর জন্য তাকে ১৯৪৯, ১৯৫৪-১৯৫৬ এবং ১৯৬৫ সালে কারাবরণ করতে হয়। আরব ও মুসলিম দেশসমূহের প্রতি পাশ্চাত্য বিশ্বের বিশেষ করে আমেরিকা ও বৃটেনের পররাষ্ট্রনীতির জন্য তিনি তাদের একজন কঠোর সমালোচক। একই সাথে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ, একপেশে ও নিঃশর্ত সমর্থনের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা করেন। ইরাকে ইঙ্গো-মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে তার বক্তব্য বিশ্বব্যপী মুসলিম জনগণের মতামতকে শাণিত করতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি একজন মানবাধিকারের প্রবক্তা। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের সপক্ষে তিনি সোচ্চার যা তার লেখনিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

ড. কারযাভী পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য, আরব ও মুসলিম দেশসমূহ ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন।
 

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: