আশারা-ই-মুবাশ্শারা

আশার শব্দের অর্থ-দশ, মুবাশ্শারা অর্থ-সুসংবাদপ্রাপ্ত । পরিভাষায়:১০ম হিজরীতে মদীনায় দুর্ভীক্ষ অবস্থায় মসজিদে নববীতে রাসূলের অনুগত পরায়ন যে ১০ জন সাহাবীকে রাসূলে আকরাম (স:) দুনিয়াতেই বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন তাদেরকে আশারা-ই-মুবাশ্শারা বলে । এদের পরিচয় নিম্নে তুলে ধরা হলো-
(১) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:)
নাম : ইসলামের ১ম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ।উপনাম: আবু বকর, উপাধি: আতিক ও সিদ্দীক ।
পিতার নাম: ওসমান, কুনিয়াত বা ডাক নাম: আবু কুহফা, মাতার নাম: উম্মুল সালমা বিনতে সাখর ।
জন্ম: তিনি হিজরতের ৫০ বছর ৬ মাস পূর্বে ‘আমুল ফীল’ এর ২ বছর ৪ মাস পরে ৫৭১-৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি রাসুল (স.) এর দু’ বছর দু মাসের ছোট। তিনি রাসুল (সা.) এর চাচাতো ভাই ছিলেন।
ইসলাম গ্রহন: ইসলাম গ্রহনের পূর্বৈ থেকেই রাসুল (স.) এর সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল। ইসলাম গ্রহনকারী নারী পুরুষের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং বয়স্ক পুরুষদের মাঝে তিনিই প্রথম।
জিহাদে অংশগ্রহন: ইসলাম গ্রহনের পর হতে সকল জিহাদেই রাসুল (স.) এর সাথী ছিলেন। তাবুক যুদ্ধে তিনিই প্রথম মুসলিম বাহিনীর ঝান্ডাবাহী ছিলেন। রাসুল (স.) এর আহবানে নিজেই সমস্ত মাল ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন।
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহন:
রাসুল (স)এর ইন্তেকালের পর তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হন এবং যোগ্যতা ও সুনামের সাথে খিলাফতের দায়িত্ব সর্বমোট দু’বছর তিন মাস দশদিন পালন করেন।
ইন্তেকাল: হযরত আবু বকর (রা.) ১৩ হিজরী ৭ই জমাদিউল উখরা মোতাবেক ২৩ আগস্ট ৬৩৪ খৃষ্টাব্দে মঙ্গলবার দিবাগিত রাতে ৬৩ বছর রয়সে ইন্তেকাল করেন।
(২) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা:)
নাম : মুল নাম ওমর উপনাসঃ আবু হাফস, গুনবাচক নাম ফারুক, পিতার নাম খাত্তাব মাতার নাম খাতনা।
জন্ম: হযরত ওমর (রা:) হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে রসুল (স.) এর জন্মের
১৩ বছর পর ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন।
ইসলাম গ্রহন: তিনি ৬ষ্ঠ/৭ম হিজরীতে ইসলাম গ্রহন করেন। ইসলাম গ্রহনের সময় তার বয়স ছিল ২৪ বছর।
ইসলাম গ্রহনের স্থান: তিনি আরকাম ইবনে আবুল আরকাম এর ঘরে যা সাড়া পাগাড়ের পাদদেশে অবস্থিত রাসুল (স.) বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ছিল।
শাহাদাত: হিজরী ২৩ সালের ২৪শে জিলহজ্ব বুধবার দিন মসজিদে নববীতে এশার নামাযে ইমামতি করার জন্য দাঁড়ালে মুগিরা ইবনে শুগার দাস আবু লু লু বিষাক্ত তরবারি দ্বারা তার মাথা ও নাভিতে মারাত্বক ভাবে আহত হবার পর ২৭ জিলহজ্ব শনিবার শাহাদাত বরন করেন।
(৩) হযরত ওসমান (রাঃ)
নাম :-ওসমান, উপনাম: – আবু আব্দুল্লাহ আবু আমর আবু লায়লা, উপাধি-জুন্নুরাইন ও গনী।
পিতার নাম: আফফান ইবনে আবুল আস, মাতার নাম আরওয়া বিনতে কুবাইয। তিনি রাসুল (স) জামাতা ও তৃতীয় খলিফা ছিলেন ।
জন্ম : তাঁর জন্ম সন নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও সংখ্যাধিক্যের মতে, তিনি আমুল ফীল এর ৬ বছর পর ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। এই হিসেবে রাসুল (স.)-এর ৬ বছর ছোট। কোন কোন বর্ণনা মতে তাঁর জন্ম হয় তায়েফে।
ইসলাম গ্রহন : তাঁর ইসলাম গ্রহন ইসলামের প্রথম যুগে রাসুল (স.) দারুল আরকামে প্রবেশ করার পূর্বে হযরত আবু বকর (রা:)-এর হাতে । হযরত ওসমান (রা:) নিজেই বলেছেন, ইসলাম গ্রহনকারী ৪ জনের মধ্যে ৪র্থ।
হিজরত : নবুয়তের পঞ্চম বছর সপরিবারে হাবশায় হিজরত করেন। হাবশার অবস্থান কালে তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহর জন্ম হয়। কিছুদিন পর আবার মক্কায় তিনি ‘যুন নুরাইন’ উপাধিতে ভূষিত হন।
জিহাদে অংশ গ্রহন : বদর যুদ্ধ এবং বাইয়াতে রিদওয়ান ছাড়া আর সকল যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহন করেন।
ইন্তেকাল : হিজরীর ৩৫ সালে ১৮ ই যিলহজ্জ আল আসওয়াদুত তুজিবী নামক ঘাতকের হাতে আসর নামাজের ৮২-৯০ বছর মাঝামাঝি বয়সে শাহাদাত বরণ করেন।
(৪) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব :
নাম: আলী, উপনাম_ আবুল হাসান, আবু তুরাব, পিতার নাম_ আবু তালিব, মাতার নাম: ফাতিমা বিনতে আসাদ। উপাধি_ আসাদুল্লাহ, হায়দার, মুর্তজা।
জন্ম : হযরত আলী (রা) রাসুল (স) এর নবুয়্যাতের দশ বছর পুর্বে জন্ম গ্রহন করেন।
ইসলাম গ্রহন : একদা খাদিজা ও রাসূল (স) কে নামাজ পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কি করছেন? জবাবে হযরত উত্তর দিলেন এটা আল্লাহর দ্বীন। হযরত খাদিজা বললেন তোমাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি ইসলামের প্রতি উদ্ধুদ্ধ হয়ে কালিমা পাঠ করেন। কেউ কেউ বলেন পনের বছর কেউ ১৬ বছর ইত্যাদি ।
ফাতেমাকে বিবাহ : রাসূল (স) কলিজার টুকরা জান্নাতি রমনীদের সম্রাজ্ঞী
হযরত ফাতেমা (রা) কে বিবাহ করেন।
জিহাদে অংশ গ্রহন : রাসূল (স) এর যুগে সংগঠিত সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহন করেন। প্রতিটি যুদ্ধেই তিনি বীরত্বের পরিচয় দেন ।
শাহাদাতঃ হিজরীর ৪০সনে ১৮ রমজান জুমাবার ফজরের নামাজে যাত্রার পথে আব্দুর রহমান বিন মুলজিম নামক খারেজী ঘাতকের রওয়ালের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। মৃতু্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মতান্তরে ৬৩/৬৫/৭০/৫৮ বছর।
(৫) যুবাইর ইবনুল আওয়াম :
নাম : নামবাইর কুনিয়াদ আবু আবদিল্লাহ এবং হাওয়ারিযু্য রাসুলি। পিতার নাম আওয়াস এবং মাতা সাদিয়া বিনতে আবদিল মুত্তালিব। মা হযরত সাদিয়া ছিলেন রাসুল (স.)-এর ফুপু।
জন্ম : হযরত যুবাইব (রা) হিজরতের আটাশ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর শৈশব জীবন সম্পর্কে সঠিকভাবে তেমন কিছু জানা যায় না।
ইসলাম গ্রহন : হযরত যুবাইর (রা:) মাত্র ষোল বছর বয়সে ইসলাম গ্রহন করেন। প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহনকারীদের মধ্যে তিনি একজন বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহনঃ যুদ্ধে অংশ গ্রহনের ক্ষেত্রে তার অবদান অনেক। তিনি বদর যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসকিতার পরিচয় দেন। বদর ছাড়াও আরো অনেক যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহন করেন।
শাহাদাত : তিনি অনেক সাহসীকাতর পরিচয় দেন এবং অবশেষে হিজরী ৩৬ সনে শাহাদাত বরণ করেন। মৃতু্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
(৬) তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা:) :
নাম : আবু মোহাম্মদ তালহা পিতা উবাইদুল্লাহ এবং মাতা সা’বা। কুরাইশ বংশের তাইস শাখার সন্তান ।
ইসলাম গ্রহন : হযরত তালহা ইসলাম গ্রহন করেন ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকে। ইসলাম গ্রহনের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। জাহেলী যুগের আবু বকরের বাড়ীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তিনি ছিলেন নিয়মিত সদস্য।
যুদ্ধে অংশগ্রহন : হযরত তালহা (রা:) বদরসহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং বিশেষ করে ওহুদ যুদ্ধে বেশী বিরত্ব ও সাহসীকতার পরিচয় দেন।
ওফাত : তিনি হিজরী ৩৬ সনের জমাদীউল আউয়াল মতান্তরে ১০ জমাদিউস সানী ৬৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
(৭) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ :
ইমাম বুখারীর মতে. জাহেলী যুগে আব্দুর রহমান ইবনে আওফের নাম ছিল আব্দু আমর। ইবনে সা’দ তাঁর তাবাকাতে উল্লোখ করেছেন। জাহেলী যুগে তাঁর নাম ছিল কাবা। ইসলাম গ্রহনের পর এর নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান।
জন্ম : তিনি আমুল ফীল বা হস্তী বৎসরে ১০ম বছর পর জন্ম গ্রহন করেন। এই বর্ণনা মতে তিনি রাসুল (স.) এর বয়সের ১০ বছরের ছোট। কেননা রাসুল (স.) আমুল ফীল এর বছর জন্ম গ্রহন করেন।
ইন্তেকাল : হযরত আব্দুর রহামান হিজরী ৩২ সনে ৭৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃতু্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর এবং তাকে মদীনার বাকী গোরস্থানে দাফন করা হয়।
(৮) সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা:)
পিতার নাম আবু ওয়াক্কাস ইতিহাসে তিনি সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস নামে খ্যাত। কুরাইশ বংশের বনু ফুছারা শাখার সন্তান। অপর নাম হামরা।
ইসলাম গ্রহন :- সাফফের ভাই উমাইর (রা) রাসুল (স) এর নবুয়াত প্রাপ্তির কিছুদিন পরই ইসলাম গ্রহন করেন। তিনি অন্যতম একজন সাহাবী ।
জিহাদে ভূমিকা : আল্লাহর পথে জিহাদে হযরত সাদের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নর্। তার বীরত্ব ও সাহসিকতা ইসলামের দুশমনদের খুব মারাত্নক পরিনতির দিকে ঠেলে দেয়। তিনিই প্রথম মুসলিম যিনি আল্লাহর পক্ষে তীর নিক্ষেপ করেন। তিনি নিজেই বলতেন আমি প্রথম আরব যে আল্লাহর পক্ষে তীর চালনা করেছি।
গোপন সংবাদ দাতা : বদর যুদ্ধের অল্প কয়েকদিন আগে রাসুল (স) কুরাইশ কাফিলার সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিন জনের যে দল প্রেরন করেন তার নেতা ছিলেন হযরত সাদ (রা)। তারা বদরের কুপের নিকট ওৎ পেতে থেকে প্রতি পক্ষ দু জনকে বন্দী করে রাসুল (স) এর নিকট আসেন। রাসূল (স) তাদের
নিকট থেকে অনেক গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন ।
ইন্তেকাল : তিনি হিজরী ৫৫ সনে ৮৫বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
(৯) আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা)
নাম : তার পুরো নাম আমীর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ আল ফিরহী আল কুরাইশী, উবাইদা নামে সকলের কাছে পরিচিত।
ইসলাম গ্রহন : ইসলাম প্রচারের প্রথম ভাগেই যারা ইসলাম গ্রহন করে মুসলমান হয়েছিল তার মধ্যে আবু বকরের মুসলমান হওয়ার পরের দিনই তিনি ইসলাম গ্রহন করেন । আবু বকরের হাতেই তিনি তার ইসলামের ঘোষনা দেন।
যুদ্ধে অংশ গ্রহন : বদর যুদ্ধের প্রাক কালে কুরাইশরা কাফিলার গতিবিধি অনুসরনের জন্য রাসূল (স) একদল সাহাবীকে পাঠান। তাদের আমীর নিযুক্ত করেন আবু উবাইদাকে। পাথেয় হিসেবে তাকে কিছু খোরমা দেওয়া হয়
ইন্তেকাল : তিনি জীবনে শেষ সময় টুকুও ইসলামের খেদমতে ব্যয় করেন । এবং অবশেষে ৬৫বছর বয়সে মারা যান।
(১০) সাইদ ইবনে যায়িদ (রা)
নাম ও পরিচিতি :- নাম সাইদ, কুনিয়াত আবুল আওয়াল। পিতা যায়েদ মাতা ফাতেমা বিনতে বাজা। উর্ধ পূরুষ কাব ইবনে লুই এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নসবের সাথে তার নসব মিলে যায়।
ইসলাম গ্রহন : তিনি ইসলামের দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহন করেন।
ইসলাম গ্রহনের ফলে নির্যাতন ঃ ইসলাম গ্রহনের ফলে আবু সাইদ (রা) অনেক নির্যাতন যুলুম সহ্য করতে হয় ।
ইন্তেকাল : তিনি তাকীক উপত্যকায় ইন্তেকাল করেন এবং মদীনায় সমাহিত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মতান্তরে ৫০/৫১/৫২ হিজরী ছিল।
Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: