ইহরাম আনুষঙ্গিক মাসআলা

হজের সঙ্গে উমরাহ পালন করা বা না করা হিসেবে হজ তিন প্রকার। এ তিন প্রকারের যে কোনো একটি আদায় করলেই ফরজ হজ আদায় হয়ে যাবে।
১. ইফরাদ : মিকাত থেকে শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদন করা।—সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৫১ : রদ্দুল মুহতার ২/৫৩০-২
২. কিরান : হজের মাসগুলোতে একইসঙ্গে হজ ও উমরাহর নিয়তে মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরাহ করা তারপর হালাল না হয়ে ওই ইহরামেই হজ করা এবং কোরবানি করা।—জামে তিরমিযি ১/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩৫-৮
৩. তামাত্তু : হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) মিকাত থেকে শুধু উমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে উমরাহ পালন শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে ইহরামমুক্ত হওয়া। এরপর এই সফরেই হজের সময় হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে হজ পালন করা এবং কোরবানি করা।—বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩৭; মানাসিক ৯৪
বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাজী তামাত্তু হজ করে থাকেন বলে এখানে শুধু হজে তামাত্তুর নিয়ম ও মাসায়েল উল্লেখ করা হচ্ছে। ইহরামের প্রস্তুতি (বাড়ি থেকে এ প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন) ষইহরামের প্রস্তুতির নিয়তে সুন্নত নিয়ম অনুযায়ী মোচ, নখ এবং শরীরের অতিরিক্ত পশম কেটে নিন।—মানাসিক ১০২
ইহরামের আগে গোসল করে নিন। গোসল সম্ভব না হলে শুধু অজু করলেও চলবে।—রদ্দুল মুহতার ২/৪৮০
গোসলের পর পুরুষরা শরীরে আতর লাগাবেন। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর না লাগানোই ভালো। কেননা, এভাবে কাপড়ে আতর লাগানো নিষেধ, যা ইহরামের পরও বাকি থাকে।— আলমাবসুত ৪/১২৩; মানাসিক ৩৫৬
ইহরামের কাপড় পরে নিন। একটি কাপড় লুঙ্গির মতো করে পরবেন। যেহেতু নিচের অংশটি সেলাইবিহীন তাই সতর যেন খুলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকুন। অপরটি চাদর পরার মতো করে শরীরের উপরের অংশে পরুন।—আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮১
উভয় কাঁধ ঢেকে চাদর পরুন। শুধু তাওয়াফের আগে ডান কাঁধ খোলা রাখতে হয়। দুই ফিতাবিশিষ্ট চপ্পল পরে নিন। মহিলারা স্বাভাবিক কাপড়, ঢিলেঢালা স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। তাদের জন্য ভিন্ন পোশাক নেই। তারা জুতা-মোজা পরবেন। তবে সুগন্ধি লাগাবেন না এবং মুখমণ্ডলে কাপড় স্পর্শ করতে পারবেন না।—মানাসিক ১১৫

উপরোক্ত নিয়মে ইহরামের প্রস্তুতি নিন, কিন্তু এখনই ইহরাম করবেন না। সামনে ইহরামের নিয়ম বলা হবে।

সফর শুরুঃ সম্ভব হলে এবং মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে সফরে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে নিন। নামাজ শেষে সফরের কবুলিয়াত, কামিয়াবি, খায়ের-বরকত এবং নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য আফিয়ত ও হেফাজতের দোয়া করুন।—গুনইয়াতুন নাসিক ৩৮

ঢাকা থেকে আগে মক্কা যাবেন, না মদিনায় যাবেন তা জেনে নিন। সফর যদি আগে মদিনায় হয় তাহলে ঢাকা থেকে স্বাভাবিক পোশাকে সফর হবে। মদিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু যদি ঢাকা থেকে জেদ্দা এবং সেখান থেকে মক্কা সফর হয় তাহলে হাজী ক্যাম্পের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইহরামের কাপড় পরে নেবেন। কিন্তু এখনই ইহরামের নিয়ত করবেন না। শুধু কাপড় পরবেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পাসপোর্ট, টিকিট, রিয়াল ইত্যাদি নিয়েছেন কিনা তা আবার দেখে নিন। সঙ্গের বড় ব্যাগে নাম লেখা হলো কিনা নিশ্চিত হোন। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের থেকে এ দোয়া পড়ে বিদায় নিন : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ। লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

উমরাহ কী?
উমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার সাঈ করা, এরপর মাথার চুল ফেলে দেয়া বা চুল ছোট করাকে উমরাহ বলে।

উমরাহর ফরজ দুইটি : ১. উমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধা। অর্থাত্ উমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা। ২. বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা।—বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭৯

আর (উমরাহর) ওয়াজিব দুইটি : ১. সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। ২. মাথার চুল চেঁছে ফেলা বা ছোট করা।—বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮০

যেভাবে ইহরাম বাঁধবেন
মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে ইহরামের নিয়ত করার আগে টুপি মাথায় দিয়ে বা মাথা ঢেকে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিন। এই দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব। প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। অন্য কোনো সূরা পড়লেও চলবে। মাকরুহ ওয়াক্ত হওয়ার কারণে কিংবা অন্য কোনো ওজরে এই দুই রাকাত নামাজ পড়তে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা, ইহরাম বাঁধার জন্য এই নামাজ জরুরি নয়। এই নামাজ ছাড়াও ইহরাম বাঁধা যায়।—মানাসিক ৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২; গুনইয়াতুন নাসিক ৭৩

এরপর পুরুষ হলে মাথার টুপি সরিয়ে নিন। অতঃপর পুরুষ-মহিলা সবাই এভাবে নিয়ত করুন : (উমরাহর ইহরামের নিয়ত) ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উমরাহর নিয়ত করছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’

(তামাত্তু হজকারী এরপর হজের সময় (৭-৮ জিলহজ) এভাবে হজের নিয়ত করবেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজের নিয়ত করছি আমার জন্য তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।)

(কিরান হজের নিয়ত) ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে উমরাহ ও হজের একত্রে নিয়ত করছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’

(ইফরাদ হজের নিয়ত) ‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজের নিয়ত করছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’

নিয়তের পর তালবিয়া পড়ুন। পুরুষ হলে উচ্চস্বরে আর মহিলা হলে অনুচ্চস্বরে তিনবার তালবিয়া পড়ে নিন।

তালবিয়া হলো :
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক। লা-শারিকা লাক।
অর্থ : ‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সব রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।’

উমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পড়ার দ্বারা আপনার ইহরাম সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন থেকেই আপনার ওপর ইহরামের বিধি-নিষেধ আরোপিত হবে।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: