দাঈ বা সত্যের পথে আহবানকারী হিসেবে গুনাবলী।

একজন মানুষ মাত্রই আল্লাহর পথে দাঈ বা আহবানকারী। দাওয়াতে দ্বীনের কাজ সৎপথে পরিচালিত একজন জ্ঞানবান মানুষের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হলে একজন মানুষকে দাওয়াতী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় গুনাবলীও অর্জন করতে হবে। দাওয়াতের যথাযথ পদ্ধতিও অনুসরণ করতে হবে। অভিষ্ট গুনাবলী ও সঠিক পদ্ধতি ছাড়া দাওয়াতী কাজে সফলতা অর্জন দুরূহ ব্যাপার। এ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হলোঃ

হিকমত ও সদুপদেশ

দাওয়াতী কাজে সফলতার জন্য হিকমত অত্যন্ত বড় গুন। হিকমতের গুন ছাড়া দাওয়াতী কাজে সফলতা কঠিন ব্যাপার। দাওয়াতকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে, হিকমত ও সদুপদেশ সহকারেই মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।

দাওয়াত কিভাবে দিতে হবে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ [١٦:١٢٥]

আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।

সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ১২৫।

কাজেই দাওয়াত দানকরীর মধ্যে হিকমত তথা প্রজ্ঞার গুনাবলী থাকতে হবে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে লোকদের মনঃস্তত্ত্ব ও পরিবেশকে সামনে রেখে দাওয়াত দিতে হবে। সম্বোধিত ব্যক্তির প্রতি কল্যান কামনা ও অকৃত্রিম দরদ ফুটে উঠতে হবে। তাহলেই দাওয়াত ফলপ্রসূ হতে পারে।

নম্র ভাষায় কথা বলা বা নম্রভাষী হওয়া

একজন দাওয়াত দানকারী অবশ্যই নম্রভাষী হব। কঠোর ভাষা, কর্কশ ব্যবহার দাওয়াত প্রসারের প্রতিকূল। দাওয়াতের ক্ষেত্রে নম্রভাষী হওয়া যে কত গুরুত্বপূর্ণ তার প্রমাণ পাওয়া যায় মহান আল্লাহর কর্তৃক হযরত মূসা ও হারূন (আঃ)-এর প্রতি প্রদত্ত হেদায়াতের মধ্যে। তাদেরকে ফেরাউনের মতো খোদাদ্রোহী শাসকের নিকট পাঠানোর নির্দেশের প্রাক্কালে বলেনঃ

اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ [٢٠:٤٣]

তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।

সূরাঃ তোহা আয়াত ৪৩

فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ [٢٠:٤٤]

অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।

সূরাঃ তোহা আয়াত ৪৪

কাজেই নম্র ভাষা ও শালীন সুন্দর-মধুর ভাষায় দাওয়াত দেয়া এবং দাওয়াত দানকারীর নম্র-মিষ্ট ও শালীনভাষী হওয়া যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।

কোমল হৃদয়

দাওয়াত দানকারীর তথা হৃদয়-মন হতে হবে কোমল, সংবেদনশীল মানুষকে আকৃষ্ট করার মতো তার হৃদয়বৃত্তিক মহৎ গুনাবলী থাকতে হবে। পাষাণ, কঠোর হৃদয়, উগ্র স্বভাব মানূষকে দাওয়াতের দিকে আকৃষ্ট করা এবং লোকদের কাছে টানার পথে বাধা। তাই আল্লাহ তায়ালা মহানবীর (সাঃ) এ গুণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেনঃ

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ [٣:١٥٩]

আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।

সূরাঃ আল ইমরান আয়াত ১৫৯

কাজেই কোমল স্বভাব আল্লাহর পথে আহবানকারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

ভালো দ্বারা মন্দের প্রতিশোধ

দাওয়াত দানকারীকে দাওয়াত দিতে গিয়ে অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে। অন্যায়ভাবে তার উপর দোষারোপ করা হবে, মিথ্যা প্রচারণা চালানো হবে। এমনই নাজুক অবস্থায় অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে এগোতে হবে। মন্দের মোকাবেলায়, মন্দ নয় ভালো দিয়েই মন্দকে প্রতিরোধ করতে হবে। আর এমনটা করলে এর ফলাফলও হবে উত্তম। মহান আল্লাহর হেদায়াতঃ

তুমি অন্যায় ও মন্দকে দূর কর সে ভালো দ্বারা যা অতি উত্তম। তাহলে দেখতে পাবে যে, তোমার সাথে যাদের শত্রুতা ছিলো সে প্রাণের বন্ধু হয়ে যাবে।

কাজেই মানুষের, প্রতিপক্ষের মন জয় করতে হলে মন্দের মোকাবেলায় উত্তম ও ভালোর নীতি গ্রহণ করতে হবে।

সূরাঃ হামীম সাজদা আয়াত ৩৪

ক্ষমাশীলতার নীতি

দাওয়াত দানকারীকে অবশ্যই ক্ষমাশীলতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। অনেকেই না বুঝে, না জেনে, অজ্ঞতাবশত বা বিরূপ প্রচারণার কারণে দ্বীনের, দ্বীনী আন্দোলনের দাওয়াতের প্রতি উন্নাসিকতা দেখাতে পারে। দাওয়াত দানকারীর প্রতি মন্দ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাতে উত্তেজিত না হয়ে লোকদের প্রতি বিরূপ না হয়ে তাদের ক্ষমা করে দেয়াই উচিত। তাদের অন্যায় আচরণের প্রতি উপেক্ষা করা উচিত। মূর্খ-অজ্ঞদের সুন্দরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর হেদায়াতঃ

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ [٧:١٩٩]

আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।

সূরাঃ আ’রাফ আয়াত১৯৯

কাজেই ক্ষমাশীলতার নীতি ও মূর্খদের সাথে জড়িয়ে না পড়া দাওয়াত দানকারীর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: