দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি

দায়িত্বশীল জবাবদিহি

عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ , قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ : " إِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ , وَكَانَتْ أُمُورُكُمْ شُورَى بَيْنَكُمْ فَظَهْرُ الأَرْضِ خَيْرٌ مِنْ بَطْنِهَا , وَإِذَا كَانَتْ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ , وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاءَكُمْ , وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا "
অনুবাদ: হযরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্নিত, তিনি বলেন- রাসুল স: বলেছেন- যখন তোমাদের শাসকগন (চরিত্রের দিক থেকে) উত্তম হবে, তোমাদের সম্পদশালী গন দানশীল হবে এবং তোমাদের সামগ্রীক বিষয়াদি পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে- তখন তোমাদের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগ (জীবন) আভ্যন্তরীন ভাগ (মৃত্যু) অপো কল্যানকর হবে।আর যখন তোমাদের শাসক গন নিকৃষ্ট, তোমাদের ধনী শ্রেনী হবে বখিল এবং তোমাদের বিষয়াদির দায়িত্ব অর্পিত হবে নারীর উপর তখন পৃথিবীর আভ্যন্তরীন (মৃত্যু) উপরিভাগ (জীবন) অপো কল্যানকর হবে। (তিরমিজি থেকে মিশকাত)

রাবীর পরিচয়:
হযরত আবু হোরায়রাহ রা:এ প্রখ্যাত সাহাবীর নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এমনকি তার নাম ৬০টি পর্যন্ত উল্লেখিত হয়েছে। তবে ইসলামের পূর্বনাম ছিল আবদু শামস্, আবদু ওমর। আর ইসলাম পরবর্তি আব্দুর রহমান ইবনে শাখর ইবনে উমায়ের ইবনে আমির। তবে আবু হোরায়রা নামে খ্যাতি অর্জন করেন।
৬২৯ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ৭ম হিজরী হুদাবিয়ার সন্ধি এবং খায়বার যুদ্ধের অর্ন্তবর্তী সময় মদীনায় ইসলাম গ্রহন করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩০ এর মত। তিনি প্রখ্যাত সাহাবী তোফায়েল ইবনে আমর আদ-দাউসর হাতে ইসলাম গ্রহন করেন। তিনি আসহাবুস সুফ্ফার অর্ন্তভুক্ত। তাঁর বর্নিত হাদিসের সংখ্যা - ৫৩৭৫ টি, মুত্তাফাকুন আলাইহে - ৩২৫টি, বুখারীতে ৭৯ টি, মুসলিম -৭৩ টি। তাঁর থেকে আটশত রাবী হাদিস গ্রহন করেছেন। হযরত ওমর রা. তাকে বাহরাইন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। ৭৮ বছর বয়সে তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মতান্তরে ৫৯ হিজরীতে। ওয়ালিদ ইবনে ওকবা তার জানাযায় ইমামতি করেন। তিনি জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত হন।

হাদিসের গুরুত্ব:
হাদিসটি প্রখ্যাত রাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. এর থেকে বর্র্নিত। অপর দিকে সীহাহ সিত্তার অর্ন্তভুক্ত তিরমিজি শরীফ থেকে সংকলিত। হাদিসে সমাজের গুরুত্বপূর্ন তিনটি শ্রেনীর অবস্থা বর্ননা করা হয়েছে।
১.এদিকে সমাজের প্রতিভু সমাজের পরিচালক ।
২.অপরদিকে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক সম্পদশালীগন । এবং
৩. সিদ্ধান্ত নেয়া তথা পরিচালনার বিষয়।
বিপরীত পে দুশ্চরিত্র শাসক, বখিল সমপদশালী এবং নারী নেতৃত্ব।

إذا كان أمرائكم خياركم এর ব্যাখ্যা:
যখন তোমাদের শাসকগন উত্তম হবেন। উত্তম দায়িত্বশীলের বৈশিষ্ট সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظّاً غَلِيظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ
অর্থাৎ: আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি রহমত যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল হয়েছেন, যদি কঠিন স্বভাবের ও কঠোর অন্তরের হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে যেত। তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
আলে ইমরান-১৫৯
১.দায়িত্বের প্রতি তীব্র অনুভুতি সম্পন্ন –
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা: বলেন একদিন আমি যখন রাসুল স: এ নিকট উপস্থিত ছিলাম তিনি মিম্বরে আসীন ছিলেন। আমাকে ল্য করে তিনি বললেন আমাকে কোরান পড়ে শুনাও। আমি বিস্মিত হয়ে আদবের সাথে জিজ্ঞেস করলাম - আমি কোরান পাঠ করে শুনাব। অথচ এ কোরান আপনার উপর নাজিল হয়েছে। তিনি বললেন হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু আমি তা অন্যের মুখ থেকে শুনতে চাই। হযরত ইবনে মাসুদ বলেন - অতঃপর আমি সূরা আন্ নিসা পড়তে শুরু করলাম এবং আমি এ আয়াত ( সূরা নিসা-৪১) পর্যন্ত পৌছলাম
- فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد و جئنابك علي هؤلاء شهيد
অর্থ্যাৎ সেই সময় কি হবে যখন আমরা প্রতিটি জনগোষ্ঠী থেকে একজন সাী উপস্থিত করব এবং তোমাকে ( তে রাসুল) সে সবের উপর একজন সাী বানিয়ে দাঁড় করাবো?
এ আয়াত শুনা মাত্র ধ্বনি এলো হে আব্দুল্লাহ পাঠ বন্ধ কর। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর দুটি চোখ দিয়ে অশ্র“র বন্যা প্রবাহিত হচ্ছে।” এ একটি মর্মস্পর্শী দৃশ্য। এটা ছিল দায়িত্বজ্ঞান ও জবাবদিহির তীব্র গভীরতর অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ। যা দিলকে বিগলিত করে, চোখে অশ্র“র বন্যা প্রবাহিত হয়। তাঁর সম্মুখে দাাঁড়াবার ভয় কতখানি প্রচন্ড হলে আজই সেই ভয়ে কেঁপে উঠতে হয় ? একটি মাত্র কালামের আয়াত শুনে।
অথচ দিনরাত আমাদের মুখে ইসলামের হুকুমত এবং দ্বীন কায়েমের কথা উচ্চারিত হয়। কই সে ভয়ে; রাতের অন্ধকারে গভীর একাকিত্বে কিংবা দিনের উজ্ঝলতায় এখন পর্যন্ত দায়িত্বের তীব্র অনুভুতির চাপ কয়বার আমাদের চু অশ্র“ভারাক্রান্ত হয়েছে? আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হবে আমার দায়িত্ব সম্পর্কে- আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করেছি? আমি কি আমার পরিবারে, আমার বাড়িতে, আমার পাড়াতে, আমার গ্রামে,আমার শেনীতে, আমার বিদ্যালয়ে সকলের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দিতে পেরেছি?

২.দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা / জ্ঞান :-
عن بريدة قال قال رسول الله صلعم القضاة ثلاثة - واحد في الجنة فرجل عرف الحق فقضي به- و رجل عرف الحق فجار فى الحكم فهو في النار ورجل قضي للناس علي جهل فهوفى النار
অর্থ্যাৎ বিচারক তিন শ্রেনীতে বিভক্ত তাদের এক শ্রেনীই জান্নাতি যে বিচারক প্রকৃত সত্য অনুধাবন করে এবং তদানুযায়ী ফয়সালা করে সে জান্নাতি। আর যে বিচারক সত্য অনুধাবন করে বিপরীত ফয়সালা দেয় সে জাহান্নামি, আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতার উপর লোকদের ফয়সালা করে সে জাহান্নামি।
্আমরা প্রতিদিন অসংখ্য বিষয়ে ফয়সালা দিয়ে থাকি, কিন্তু কয়টি বিষয়ে জেনে বুঝে সঠিক ফয়সালা দিতে পারি? আমরা কি সচেতন হবনা? আমরা কি আরো আরো অধিক জ্ঞান অর্জন করবো না? আমার দায়িত্ব কি আমার জন্যে জাহান্নামের কারণ হয়ে যাবে?
৩.দায়িত্বশীলদের সর্বাধিক কল্যণকামিতা:
عن معقل بن يسار قال سمعت رسول الله صلي الله عليه و سلم يقول أيما وال من أمر المسلمين شيأ فلم ينصح لهم و لم يجحد لهم لنصحه و جهده لنفسه كبه الله على جهده فى النار-
অর্থ্যাৎ হজরত মাকাল বিন ইয়াসির রা. বলেন, আমি শুনেছি, রাসূল স. বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কোন বিষয়ের দায়িত্বশীল হল- কিন্তু পরে সে তাদের কল্যান কামনায় এতটুকুও কাজ করলনা, যা সে নিজেন জন্যে করে থাকে। আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিপে করবেন।

৪.উত্তম দায়িত্বশীলের গুনাবলী :
يقول خياركم أئمتكم الذين تحبونهم ويحبونهم و يصلون عليهم و يصلون عليكم و شرار أئمتكم الذين تبغضونهم و يبغضونهم
অর্থ্যাৎ তোমাদের ঐ নেতারাই উত্তম, যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসেন, তোমরা তাদের জন্য দোয়া কর আর তারাও তোমাদের জন্য দোয়া করে। আর তোমাদের ঐসব নেতারাই নিকৃষ্ট, যাদের প্রতি তোমরা বিুব্ধ এবং তারাও তোমাদের উপর বিুব্ধ।
৫.সায়ীদ রা. দায়িত্বশীলের মডেল :
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সায়ীদ বিন আমের আল জুহামী রা: এর খোদাভীতি , প্রতিভা ও যোগ্যতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে হযরত ওমর রা: তাঁকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করতে মনস্থ করেন। কয়েকদিন পর তাকে দরবারে ডেকে এনে জানালে তিনি বিব্রত বোধ করেন এবং বললেন- يا عمر نسدتك الله تفتني হে ওমর আল্লাহর শপথ এ কঠিন কাজের মাধ্যমে আপনি আমাকে কোন পরীায় ফেলবেননা। এতে হযরত ওমর রা: রাগান্বিত হয়ে বললেন-
ويحكم وضعتم هذا الأمر فى عنقي ثم تخليتم عني
কি আশ্চর্য ! আপনারা আমাকে খিলাফতের কঠিন দায়িত্ব অর্পিত করে নিজেরা ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে চান ? আল্লাহর শপথ আমি এক মুহুর্তের জন্যও আপনাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারিনা। এভাবে তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গভর্নর নিযুক্ত করলেন।
একবার এক প্রতিনিধি দলের কাছে তিনি হিমসের অভাবীদের তালিকা চান যাতে গভর্নরের নাম উল্লেখ ছিল। এতে ওমর প্রশ্ন করেন কে এ সায়ীদ ? উত্তরে তারা বলেন - আমাদের গভর্নর।
আল্লাহর শপথ আমরা স্যা দিচ্ছি যে, আমাদের গভর্নরের দীর্ঘ সময় এমনও অতিবাহিত হয় যখন তাদের রান্না করার কিছুই থাকেনা।

হযরত উমর রা: হিমসের মুসলমানদের অবস্থা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য সিরিয়া গেলে সেখানকার জনগনের কাছে তাদের গভর্নর সাঈদ বিন আমের আল-জুমাহী সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্বভাবসুলভ কারনে গভর্নরের বিরুদ্ধে এমন ৪টি অভিযোগ পেশ করে, যার প্রত্যেকটি অপরটির চেয়ে গুরুতর।
সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহী রা: সম্পর্কে উমর ফারুক রা: খুবই উচ্চধারনা পোষন করতেন এবং তাঁর খোদাভীতি ও দীনদারী সম্পর্কেও তিনি পরিস্কার ধারণা রাখতেন; কিন্তু এর পরেও তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ চারটি গুরুতর অভিযোগ শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়লেন।
অত:পর আমি গভর্নর এবং হিমসবাসীদের একত্র করে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম :
গভর্নর সম্পর্কে তোমাদের প্রথম অভিযোগ কী?
তারা বলল :

১.‘তিনি প্রত্যহ তাঁর দফতরে বিলম্ব করে আসেন।’
আমি এ অভিযোগের জওয়াব দেয়ার জন্য গভর্নর সাঈদকে আহবান জানালাম।
সাঈদ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন :
‘আমি এর উত্তর দেয়া পছন্দ করছিনা এই জন্য যে, এটি একান্তভাবেই আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। কিন্তু আপনার নির্দেশের কারনেই আমাকে বাধ্য হয়ে তা বলতে হচ্ছে।
‘আমার ঘরে কোন কাজের খাদেম বা চাকরানী নেই। তাই আমি প্রত্যহ সকালে পরিবারের সদস্যদের জন্যে প্রথমে রুটির জন্য আটা দিয়ে খামির তৈরী করি, তারপর তা কিছু সময় রেখে দিতে হয় রুটি তৈরির উপযোগী করার জন্য। এরপর রুটি বানিয়ে রেখেই অযু গোসল করে প্রস্তুত হয়ে দফতরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। এ কারনে অফিসে আসতে আমার সামান্য বিলম্ব ঘটে।’
অতঃপর আমি জনগনকে উদ্দেশ্য করে বললাম:‘তোমাদের দ্বিতীয় অভিযোগ কী?
তারা বলল :
২.‘আমদের দ্বিতীয় অভিযোগ হলো, রাতের বেলা কোন প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকা হলে তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেননা।’
এ অভিযোগ শুনে গভর্নর সাঈদের উদ্দেশ্যে বললাম :
‘হে সাঈদ! এ ব্যপারে তোমার বক্তব্য কী?
সাঈদ বলল:‘এটিও আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, যা আমি জনসমক্ষে প্রকাশ করা মোটেই পছন্দ করিনা। এতদসত্ত্বেও আপনার নির্দেশ পালনার্থে আমাকে বলতে হচ্ছে।’এরপর গভর্নর সাঈদ বলতে শুরু করলেন :
‘আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও জনসাধারনের খিদমতের জন্যে এবং রাতকে আল্লাহর ইবাদতের জন্যে নির্দিষ্ট করে নিয়েছি। তাই রাত্রি বেলা তাদের প্রয়োজনে আমি সাড়া দিতে পারিনা বলে দুঃখিত।’
এরপর আমি তাদের নিকট তৃতীয় অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তারা বলল :
৩.‘সাঈদ বিন আমের রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু মাসে একদিন তাঁর কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।’
আমি অভিযোগের উত্তর দেওয়ার জন্যে গভর্নর সাঈদের প্রতি আহবান জানালাম। গভর্নর সাঈদ উত্তরে বললেন:
‘আমীরুল মুমিনীন! আমার ঘরে কোন কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয়। এ ছাড়া পরনের এই পোশাক ছাড়া আমার অন্য কোন পোশাক না থাকায় মাসে যেদিন বাজার করি সে দিনই বাজার শেষে এ পোশাক পরিষ্কার করি এবং তা শুকানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয়। তাই মাসে একদিন কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ছাড়া আমার উপায় থাকে না।’
এবার আমি সাঈদ সম্পর্কে জনগনের কাছে তাদের সর্বশেষ অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তারা বলল:
৪.‘মাঝে মাঝে আমাদের গভর্নর এমনভাবে অজ্ঞান ও বেহুশ হয়ে পড়েন যেন তাঁর পার্শ্বে উপবিষ্ট লোকদেরও তিনি চিনতে পারেননা।’
এবারও আমি সাঈদকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলাম: ‘কী ব্যাপার সাঈদ! জনগন তোমার ব্যাপারে এসব কী বলছে ? গভর্নর সাঈদ উত্তরে বলেন :
‘হে আমীরুল মুমিনীন ! মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি মক্কার এক জনসমুদ্রের মাঝে খুবাইব ইবনে আদি রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেছি। কুরাইশরা জীবিত অবস্থায় তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তরবারির আঘাতে টুকরো টুকরো করছিল আর বলছিল :
‘তুমি কি রাজি আছ ? যদি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমারই উপস্থিতিতে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে হত্যা করি?
উত্তরে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলছিলেন :
‘আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে হত্যার বিনিময়ে আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার-পরিজনের নিকট নিরাপদে ফিরে যাওয়া তো দূরের কথা, পথে হেটে যেতে তাঁর পায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমি সহ্য করতে পারব না। মুনাফিকী জীবন থেকে শহীদি মৃত্যু আমার কাছে অনেক উত্তম।’
পুনরায় সাঈদ বললেন :
‘এ করুন দৃশ্যের কথা স্মরন হলেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আমি সেদিন খুবাইব রা: আনহুকে সাহায্য করিনি ? আল্লাহ ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আমার এই অপরাধকে ক্ষমা করবেননা। এই ভয়ে আমি মাঝে মধ্যে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি।’
গভর্নর সাঈদের এই উত্তর শুনে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলাম। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্যে যিনি সাঈদের প্রতি আমার সুধারনাকে আরো একবার সত্যে পরিণত করেছেন।

و أغنياؤكم سماؤكم এর ব্যাখ্যা:

لَن تَنَالُواْ الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللّهَ بِهِ عَلِيمٌ {৯২}
অর্থাৎ: তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর জন্যে প্রিয় বস্তু ব্যয় করেব না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন। আলে ইমরান-৯২
الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاء وَالضَّرَّاء
অর্থাৎ: যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে কি সচ্ছল কি অসচ্ছল সব অবস্থায়। আলে ইমরান-১৩৪

أمركم شوري بينكم : এর ব্যাখ্যা:

امركم شوري بينهم- سورة الشوري
অর্থাৎ তোমরা কাজ কর পরস্পর পরামর্শ করে। আশশুরা-৩৮
ما ندم من إستشار و لا خاب من إستخار
অর্থাৎ যে পরামর্শ নিয়ে কাজ করে তাকে লজ্জিত হতে হযনা আর যে এস্তেখারা করে কাজ করে তাকে ঠকতে হয়না।
المستاشار المؤتمن
অর্থাৎ যে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে সে নিরাপদ থাকে।
হাদিসের শিক্ষা:
১.দায়িত্বশীল হবেন সবক্ষেত্রে অনুকরণীয়।
২.দায়িত্বশীল হবেন সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু।
৩.প্রত্যেকে তার সম্পদ অনুযায়ী আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।
Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: