ধূমপান কেন হারাম

ধূমপান কেন হারাম

যারা ধূমপান করে তাদের যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন, ভাই ধূমপান কি ভাল জিনিস? সে অবশ্যই বলবে “না”। তাহলে ইসলাম কি ধূমপান সমর্থন করে? অনেকে এটার কারন হিসেবে ধূমপান করাকে ইসলামে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিন্তু সমস্ত আলেম ও ইসলামিক স্কলাররা একমত যে ধূমপান করা সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি একান্ত বাধ্য না হলে (যেমন- তাকে কেউ বিয়ে করছে না, কিংবা বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত ছেলে পাওয়া যাচ্ছেনা এমন পরিস্থিতি না তৈরি হলে) ধূমপানকারীকে বিয়ে করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। (the fatwas of the Standing Committee for Scholarly Research & Issuing Fatwas)

ধূমপান কেন হারাম?

১. মুসলমানদের জন্য খাদ্যদ্রব্য দুই প্রকার। হালাল আর হারাম। এর বাহিরে কিছু নেই। আল্লাহ বলেন, “……তিনি (আল্লাহ) তাদের জন্য পবিত্র ও ভাল বস্তুকে হালাল করেদেন, আর খারাপ বস্তুকে করেন হারাম”। (সূরা আরাফঃ ১৫৭)
সিগারেট কি পবিত্র ও ভাল বস্তু? অবশ্যই এটা খারাপ বস্তু, আর উপরক্ত আয়াত দিয়ে আল্লাহ খারাপ বস্তুকে হারাম করেছেন।

২. আল্লাহ বলেন, “… এবং খাও ও পান কর, কিন্তু অপব্যয় ও অমিতাচার করোনা। কেননা, আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেন না?” (সূরা আরাফঃ ৩১)
এই পৃথিবীর সবাই জানে, ধূমপান করা মানে টাকার অপচয় করা। এমন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ আছে কি যে সিগারেটকে অপচয় বলবে না? আর সকল অপচয় হারাম। ধূমপানের জন্য যে পরিমান অর্থ সারা পৃথিবীতে ব্যয় হয়, তা দিয়ে কোটি কোটি ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা যেত।

৩. সিগারেটের গন্ধ আশপাশের মানুষকে কষ্ট দেয়। এই গন্ধ যে কতটা অসহ্য তা শুধু অধূমপায়ীরাই বুঝে। ঘুম থেকে উঠার পরে একজন ধূমপায়ীর মুখে যে দুর্গন্ধ হয়, তা দুনিয়ার কোন বাজে গন্ধের সাথেও তুলনা করা যাবেনা। রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়৷” (বুখারী)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা স্ত্রী-পরিজন, বন্ধু বান্ধব ও আশে-পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে৷ অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপান কারীকে অভিশাপ দেন ৷ তাছাড়া বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, চেইন স্মোকারদের স্ত্রীদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা বেশি।

৪. মহানবী (সঃ) রসুন বা পেয়াজের গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন কেননা এই গন্ধ অন্য মুসল্লিদের কষ্ট দেয়। আর সিগারেটের গন্ধ তো সেগুলো হতে কয়েক হাজারগুন বেশি কষ্টদায়ক।

৫. আল্লাহ বলেছেন,
“তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদের প্রতি অতি দয়ালু।” (সূরা নিসাঃ২৯)
রাসুল (সঃ) বলেছেন, “তোমার প্রতি তোমার শরীরের অধিকার আছে।”

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় ধূমপানের কারণে। যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায়, তাদের মধ্যে ৯০% হল ধুমপানের কারণে। এছাড়া হৃদ রোগ, গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ অনেক জীবননাশকারি রোগ সৃষ্টি করে ধূমপান। এমনকি গর্ভবতী মায়েরা ধূমপান করলে তাদের বাচ্চাদের বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মানোর সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। ইসলামে কখনো এভাবে নিজের বা মানুষের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ হারাম।

৬. আল্লাহ বলেছেন, “এবং তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসে পতিত করো না।” (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৯৫)
ধূমপান ক্যান্সার, যক্ষা প্রভৃতির মত ধ্বংসাত্মক রোগের কারণ। ধূমপান নিজে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়।

৭. ধূমপান যে বিষপান এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে। এমনকি ইউরোপে একসময় এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ধূমপানকারীকে শাস্তি প্রদানও করা হত। ইসলামে সকল বিষাক্ত জিনিস ভক্ষন করা নিষিদ্ধ। রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অনন্তকাল তাই চাটতে থাকবে। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে।” (সহিহ মুসলিম)

৮. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামীদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
“এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবেনা ক্ষুধাও নিবারণ করবে না৷” (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা পানকারীর পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নেভায় না৷ ধুমপানের তুলনা জাহান্নামী খাবারের সাথেই করা যায়৷

৯. বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় এটা সমাজের ভাল মানুষের কাজ না। সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮% ভাগ ধূমপান করে থাকে৷ যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের ৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন শুরু করেছে৷

ধূমপান করা, বিক্রি করা ও তাকে উৎসাহ দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

► আমার এই লেখাটি পড়ার পর অনেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, হারাম বস্তুগুলোর নাম ধরে ধরে আল্লাহ তো বিস্তারিত ভাবে ঘোষনাই করেছেন। কুরআনে আর হাদীসে কোথাও ধূমপানকে সুস্পষ্ট ভাবে হারাম করা হয়নি। তাহলে আল্লাহ যা হারাম করেননি, তা পৃথিবীর কোন মানুষের বা স্কলারের অধিকার নেই হারাম করার।
আবার অনেকে ভাবতে পারেন, পৃথিবীর কোন দেশ বা গবেষক বা কোন দেশের মাদক দব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অদ্যাবধি সিগারেটকে মাদকের তালিকায় নিয়ে আসেনি। তাহলে এটা তো মাদক বা নেশার বস্তু না।
আবার অনেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, পূজিবাদের ধারক বাহক হয়ে তাদের স্বার্থ বাস্তবায়ন করার জন্য এই লেখার মাধ্যমে দেশের তামাক শিল্প বন্ধকরার ধান্ধাবাজি চলছে না তো!!!

প্রথমত বলতে চাই, আমি যা লিখেছি তা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্কলারদের (the Standing Committee for Scholarly Research and Issuing Fatwas, https://www.islamqa.com/ ) দেওয়া ফতোয়া থেকে লিখেছি যাদের চেয়ারম্যান বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ। এমনকি বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েকেরও এই মত। তাছাড়া শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন, ড. মুহাম্মদ আলি আল বার, শায়খ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম, শায়খ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল সাদিসহ প্রখ্যাত সকল ইসলামিক স্কলাররা ধূমপানকে হারাম হিসেবে গণ্য করেছেন।

দ্বিতীয়ত, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন সংস্থা সিগারেটকে মাদক বা নেশার বস্তু হিসেবে নিষিদ্ধ করেনি কোথাও। কিন্তু তারা যা বলবে সেটাই কি ইসলামে জায়েজ বা নাজায়েজ হয়ে যাবে? বাংলাদেশে লাইসেন্স করে মদ খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তাহলে কি এই লাইসেন্স করা মদ খাওয়া ইসলামে হালাল?

তৃতীয় কথা হল, ইসলামে দুইটা বিষয় আছে- ১. শরীয়ত, ২. ফিকাহ। শরীয়ত হল কোরআন ও হাদিস যা অপরিবর্তনীয়। আর শরীয়তের আলোকে ফিকাহ তৈরি হয়। আপনি যদি বলেন, বাসের ভিতর চলন্ত অবস্থায় নামাজ হবেনা কারন নবী (সঃ) কখনো এ বিষয়ে কিছু বলেননি। কিন্তু ফিকহবিদ কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে ফিকহ তৈরি করেছেন। হেরোইন, ইয়াবা, কোকেন তো হারাম করে কোন কোরআন, হাদিস নেই? তাহলে কি এগুলো হালাল হয়ে যাবে? আসলে ইসলাম হল সর্বসময়ের জন্য। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম একটা মূলনীতি দিয়েছে, যেগুলো কোরআন ও হাদিসে এসেছে। রাসুল (সঃ) তো তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করতেন। তাহলে কি আমরা এখন সেই তরবারি দিয়েই যুদ্ধ করবো? না, এক্ষেত্রে আমাদের ইসলামের যে মূলনীতি- জিহাদ বা যুদ্ধ, সেটা মানতে হবে, অস্ত্রটা বড় কথা না। অনুরুপভাবে বস্তু ভক্ষন করার ক্ষেত্রেও ইসলাম একটা মূলনীতি দিয়েছে যা আমার প্রত্যেকটা পয়েন্টে উল্লেখ আছে। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সিগারেটের মত ক্ষতিকর যেই বস্তু যেই নামেই আসুক না কেন, সেটা হারাম হবেই।

চতুর্থ কথা, পুঁজিবাদরাই হারাম জিনিসকে হালাল হিসেবে চালিয়ে ব্যবসা করে ও তার ব্যপক প্রচারনা চালায়। সিগারেট সারা বিশ্বের মানুষ খায়। এটা আমাদের দেশের না শুধু। যারা মেডিক্যাল প্রফেশনের সাথে যুক্ত তারাই জানে অসংখ্য রোগের ক্ষেত্রেই তার কারনগুলোর ভিতর সিগারেট অন্যতম। আপনি কি মনে করেন, যে জিনিস ব্যক্তি বা সমাজের জন্য খারাপ, ইসলাম সেই জিনিস সমর্থন করে তা হালাল করে দিবে? ইসলামকে আপনি এমন বাজে বা হেলেফেলার কিছু মনে করবেন না। যেটা হারাম, সেটা হারাম। মানলে মানবেন, না মানলে মানবেন না। কিন্তু দয়া করে হারামের পক্ষে সাফাই গাইবেন না বা এর পক্ষে প্রচারও করেন না । জেনে বুঝে যদি নিজেকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চান, সেটা আপনার ব্যপার, কিন্তু অন্যকেও সাথে নিয়েন না দয়া করে।

আসলে যেসব বিষয়ে আমাদের সন্দেহ থাকে সেগুলোকে বাদ দিতে রাসুল (সঃ) স্বয়ং বলেছেন- “হালাল সুস্পষ্ট, হারাম সুস্পষ্ট। এর মাঝে রয়েছে অনেক সন্দেহ ও সাদৃশ্যের বিষয় যার ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষেরই ধারনা নেই। যারা এসব সন্দেহ ও সাদৃশ্যের বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, তারা নিজেদের ধর্ম ও মান রক্ষা করল। আর যে এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে প্রকারান্তরে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ল .. .. “। (বুখারী ও মুসলিম)

► দয়া করে এইটি সবাই প্রচার করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি এর উত্তম প্রতিদান পাবেন। আর বন্ধুকে সিগারেট খাওয়ানোর আগে একটু চিন্তা করুন। রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতির পথনির্দেশ দিল, সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না।”
(মুসলিম)

আপনি একজনকে সিগারেট খাওয়ালেন কিংবা তাকে খাওয়া শিখাইলেন। তাহলে উপরক্ত হাদিস অনুযায়ী আপনি আজীবন তার পাপ পেতে থাকবেন। আবার আপনি যদি সিগারেট হারাম, এটা প্রচার করে মানুষকে তা থেকে বিরত রাখলেন, তাহলে আজীবন তার সওয়াব পেতে থাকবেন।

যারা ধূমপান এখনো করছেন, তারা খাস দিলে আল্লাহর কাছে তওবা করে যেভাবে পারেন, এই মুহূর্তে ধূমপান ও অন্যান্য পান বন্ধ করুন। আর কাফফারা সরূপ ভাল কাজ যেমন- নামাজ বেশি বেশি করে আদায় করুন। আল্লাহ আপনাকে নিশ্চিত উত্তম প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর, একেবারে বিশুদ্ধ তওবা যাতে আল্লাহ তোমাদের ক্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করে দেন এবং তোমাদেরকে সেই জান্নাতে প্রবেশ করান যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত।” (সূরা আত্ তাহরীম-আয়াত-৮) ।ড

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: