মোবাইল ফোনের অপব্যবহার

মোবাইল ফোনের সুব্যবহার বা অপব্যবহার আলোচনার পূর্বে আমাদের সরণ করা উচিত এ মোবাইল ফোন আল্লাহর প্রদানকৃত নেয়ামতরাজীর মাঝে একটি বড় নেয়ামত বা উপঢৌকণ।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নেয়ামত তাঁর বান্দাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। তাতে আছে অনেক উপকারী দিক যা জ্ঞানী ব্যক্তিরা গ্রহণ করেছেন এবং নেয়ামত গুলোকে আনুগত্যের কাজে সঠিকভাবে ব্যবহার করত: কথায়-কাজে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করেছেন ।
আমাদের মাঝে দুই শ্রেণীর মানুষ পরিলক্ষিত হয়।
প্রথম প্রকার মানুষঃ
❖ কথার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করত: বিনীতচিত্তে অধিকহারে “আল-হামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার) পাঠ করে ও অন্তরে তাঁর বড়ত্ব অনুভব করে। আল্লাহ বলেনঃ
﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ﴾
অর্থঃ “যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর যিকিরে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর
যিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়” [সূরা রা’দঃ ২৮]
❖ কর্মের মাধ্যমে শুকরিয়া জ্ঞাপন করত: আল্লাহ অনুমদিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত পথে বাড়া-বাড়ি করা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَعْتَدُوهَا﴾
অর্থঃ “এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তা অতিক্রম করো না” [সূরা বাকারা-২২৯]
দ্বিতীয় প্রকার মানুষঃ যারা জানে না কিভাবে আল্লাহর নেয়ামতেররাজীর সুব্যবহার করতে হয়। তারা নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার না করে সীমালংঘন করে। ফলে তারা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়। আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ﴾
অর্থঃ “আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর” [সূরা ইবরাহীমঃ ৭]
﴿وَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ عَتَتْ عَنْ أَمْرِ رَبِّهَا وَرُسُلِهِ فَحَاسَبْنَاهَا حِسَاباً شَدِيداً وَعَذَّبْنَاهَا عَذَاباً نُكْراً﴾
অর্থঃ “কত জনপদ তাদের প্রতিপালকের ও তাঁর রাসূলদের নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করেছিল দম্ভভরে। ফলে আমি তাদের নিকট হতে কঠোর হিসাব নিয়েছিলাম এবং তাদেরকে কঠিন আযাব দিয়েছিলাম”। [সূরা তালাকঃ ৮]
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আল্লাহ তা’আলার অগণিত নে’য়ামতের অন্যতম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ বহুদূর এগিয়ে চলেছে, হয়েছে সল্প পরিশ্রমী। সহজ করছে অনেক অসম্ভব বিষয়। এসেছে উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, বেঁচে গেছে মানুষ শারীরিক ক্লান্তি থেকে। হাতের মুঠোয় বাসা বেঁধেছে ‘মোবাইল ফোন’। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেকে এই সুন্দর ব্যবস্থাপনা মোবাইল ফোনের ব্যবহার যথাযোগ্যভাবে না করে তার মাধ্যমে শরীয়ত বিরোধী কর্মে লিপ্ত হয়েছে।
নিম্নে মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করছি, হতে পারে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হবে। উদাসীন সচেতন হবে। আল্লাহর অনুগ্রহে ত্রুটিকারী সঠিক পথের সন্ধান পাবে।
উল্লেখ্য, মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপকারিতা প্রচুর যা বর্ণনা নিঃষপ্র্রয়োজন। কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিকও কম নয়। তাই সতর্কতার জন্য শুধুমাত্র এর ক্ষতিকারক দিকগুলোই উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
০১. মোবাইলের রিংটোনে গান-বাজনা নির্ধারণ করাঃ
সর্ব সম্মতভাবে ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা হারাম। অতএব এ হারাম ব্যবহার থেকে সকল মুসলমানের বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন তা যেভাবেই হোক না কেন।
❖ নিঃসন্দেহে যারা মোবাইল ফোনে রিংটোন গান-বাজনা নির্ধারণ করল তারা আল্লাহর এ নেয়া’মতের প্রকৃত মূল্যায়ন করল না। আল্লাহর নবী ভবিষৎবাণী করেছেন যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর কিছু সংখ্যক মানুষ এ গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে। মনে হচ্ছে বর্তমানে মানুষ গান-বাজনা হালাল ভেবেই ব্যবহার করেছে। কি দুঃসাহস! তারা গান-বাজনাকে মসজিদের মত সর্বত্তম স্থানেও বাজাতে কুন্ঠাবোধ করছে না। আফ্‌সোস তাদের জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “নিশ্চয়ই আমার উম্মতের একদল মানুষ ব্যভিচার, রেশম, মদপান এবং গান-বাদ্যকে হালাল মনে করবে”। [বুখারী শরীফ]
এ ধরণের গান-বাজনা ব্যবহারকারী যেন কখনই না ভাবেন দুনিয়ার এ রং-তামাশায় আল্লাহ তা’আলা সন্তষ্ট। বরং মনে রাখা উচিত অনেক সময় এই আশ্লীলতা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
﴿فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ. فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
অর্থঃ “অতঃপর তাদেরকে যা কিছু্‌ উপদেশ ও নসীহত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্যে প্রতিটি বস্তুর দরজা উন্মুক্ত করে দিলাম। শেষ পর্যন্ত যখন তারা দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লাসিত হলো তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়লো। অতঃপর অত্যাচারী সমপ্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হলো, আর সমস্থ প্রশংসা বিশ্ব প্রভু আল্লাহরই জন্যে”। [সূরা আনআমঃ ৪৪-৪৫]
❖ বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর বিশারদ আল্লামা কুরতবী (রহঃ) বলেনঃ
❍ “যা নসীহত করা হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল” অর্থাৎ তাদেরকে যা নসীহত করা হয়েছিল তা তারা একেবারেই ছেড়ে দিল।
❍ “আমি তাদের জন্য প্রতিটি বস্তুর পথ উন্মুক্ত করে দিলাম” অর্থাৎ অধিক নেয়ামত ও বিভিন্ন ধরণের উত্তম বস্তু দানের মাধ্যমে।
❍ “যখন তারা দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লাসিত হলো” অর্থাৎ তারা অহংকার করে খারাপ কাজে লিপ্ত হলো এবং ভেবে নিল আল্লাহ ভালবেসেই তাদেরকে সে নে’য়ামত দিয়েছেন এটা কখনো নষ্ট হবে না।
❍ “তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম” অর্থাৎ স্বমূলে উৎপাটন করে দিলাম।
❖ হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ আল্লাহ তা’আলা যাকে দুনিয়াতে অধিক সম্পদ দান করেন অথচ সে আল্লাহর পাকড়াওকে ভয় করে না আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিদান কমিয়ে দেন এবং চলার পথ দূর্বল হয়ে যায়। আর আল্লাহ তা’আলা যাকে দুনিয়াতে সল্প দেন অথচ সে তুষ্ট হয় না আল্লাহ তা’আলা তারও প্রতিদান কমিয়ে দেন এবং চলার পথ দূর্বল হয়ে যায়।
০২. মোবাইল ফোন বন্ধ না করে মসজিদে প্রবেশ করাঃ
নির্ঘাত এতে মুছল্লীদের কষ্ট হয় ও নামাযে ত্রুটি ঘটে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
﴿وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَاناً وَإِثْماً مُبِيناً﴾
অর্থঃ “মু’মিন পুরুষ ও নারী কোন অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা তাদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে”। [সূরা আহযাবঃ ৫৮]
সমাধান হলোঃ মোবাইল ফোন বাড়ীতে কিংবা গাড়ীতে রেখে মসজিদে প্রবেশ করা অথবা রিংটোন বন্ধ করে প্রবেশ করা। কেননা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্য মুসলমানকে কষ্ট দেয়াও হারাম।
০৩. মসজিদে হারামে (মক্কা-মদীনার মসজিদে) মোবাইল নিয়ে প্রবেশ ও কথোপকথনঃ
নিঃসন্দেহে ইবাদাতরত মানুষের মাঝে উঁচু আওয়াজে কথোপকথন ইবাদাতের বিঘ্নতা ঘটে ও মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট হয়। মক্কা-মদীনার মসজিদসহ অন্যান্য সকল মসজিদ পূত-পবিত্র ও সম্মানিত স্থান। এর সম্মান রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
০৪. মসজিদের ভিতর মোবাইল নিয়ে খেলা-ধূলা করাঃ
উচিৎ হলো মসজিদে প্রবেশের সময় দুনিয়াবী সব ধরণের ব্যস্ততা ও চিন্তা চেতনা ছেড়ে নামায ও অন্যান্য বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করা। যেমনটি নীতি ছিলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববতী সৎ ব্যক্তিদের। কিন্তু তা না করে মোবাইলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে অযথা খেলা-ধূলা করা মসজিদের আদবের খেলাফ ও পূর্বসূরীদের নীতি বিরুদ্ধ কাজ।
০৫. মোবাইল ফোন বন্ধ না করলে নামাযে বিনয়-নম্রতা বিনষ্ট হয়ঃ
প্রকৃত মু’মিনদের গুণাবলীর মাঝে একটি বড় গুণ হলো তারা নামাযে বিনয়ী-নম্র হবেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ
﴿الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُونَ﴾
অর্থঃ “যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র”। [সূরা মু’মিনুন-২]
সমাজে পরিলক্ষিতঃ অনেকে মোবাইল নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন ও জামাতে শরীক হোন, এমতাবস্থায় মোবাইল ফোন বেজে উঠে কিন্তু মোবাইল বন্ধ না করে নামায পড়তেই থাকেন এবং মোবাইলে রিংও বাজতে থাকে। তারা মনে করেন, নামাযাবস্থায় মোবাইল বন্ধ করলে আমার নামাযের বিনয়-নম্রতা নষ্ট হবে অথচ এতে অন্যান্য মুছল্লীদের নামায নষ্ট হচ্ছে এতে কোন ভ্রুক্ষেপও করেন না। বার বার রিং বেজে উঠলে নিজের নামাযের ব্যাঘাত হয় তা বুঝতে পারে না।
এমতাব’স্থায় উচিৎ হলোঃ অন্য মুছল্লীদের নামায নষ্ট না করে মোবাইল বের করে বন্ধ করা। কারণ রিং বাজতে থাকলে মু’মিনকে কষ্ট দেয়া হয় এবং তাদের নামাযকেও নষ্ট করা হয়। আল্লাহ এরশাদ করেনঃ
﴿إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ﴾
অর্থঃ “নিশ্চয় যারা মু’মিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য দুনিয়া-আখিরাতে কষ্ট দায়ক শাস রয়েছে এবং আল্লাহ জানেন
০৬. অহংকার ও অন্ধানুসরণ করে উন্নত দামী মোবাইল ব্যবহার করাঃ
✤ অংকারঃ অজ্ঞতা বশত: অন্ধানুসরণ এবং অন্যের উপর গর্ব প্রকাশ করা নিন্দনীয় কাজ। গর্ব প্রকাশের ফলে আত্মতুষ্টি, নিজের বড়ত্ব, সত্য প্রত্যাখ্যান ও অন্যের প্রতি তুচ্ছ মনোভাব সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
﴿وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولاً﴾
অর্থঃ “ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না”। [সূরা ইসরাঃ ৩৭]
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এক ব্যক্তি উন্নত কাপড় পরিধান করে মাথার চুল আঁচড়িয়ে অহংকার বশত চলার কারণে আল্লাহ তাকে মাটিতে ধসিয়ে নিমর্জ্জিত করে দেন। সে কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই মাটির নীচে যেতে থাকবে”। [বুখারী-মুসলিম]
✤ অন্ধ অনুকরণঃ অজ্ঞতা বশত: অন্যের অনুসরণ অনেক সময় শরীয়ত বিরোধী কর্মে লিপ্ত হতে হয়। আল্লাহ তা’আলা সে অনিষ্টতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং যে সমপ্রদায় তাদের বাপ-দাদার অনুসরণের দোহাই দেয় তাদের দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ. قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ. فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
অর্থঃ “অনুরূপ আপনার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলতোঃ আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। সে (সতর্ককারী) বলতোঃ তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে পথে পেয়েছো, আমি যদি তোমাদের জন্যে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশ আনয়ন করি। (তবুও কি তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে?) তারা বলতোঃ আপনি যা সহ প্রেরিত হয়েছেন আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দিলাম; দেখো, মিথ্যাচারীদের পরিণাম কি হয়েছে”। [সূরা যুখরুফঃ ২৩-২৫]
উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায়, প্রমাণ ছাড়া অন্যের অন্ধানুসরণ করা মোটেও উচিৎ নয়। তবে প্রকৃত সত্যের অনুসারী আলেম-ওলামাগণের অনুসরণ করায় কোন দোষ নেই।
০৭. উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের অহেতুক মোবাইল ব্যবহার করাঃ
এ বয়সে যুবক-যুবতীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকই বেশী। এরা ফোনালাপে বন্ধু-বান্ধব জুটিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রবৃত্তির চাহিদা মিটায় ও অনর্থক অপচয় করে। অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজে লিপ্তের মাধ্যম হয়ে যায়। এ অবস্থায় পিতা-মাতা বা দায়িত্বশীলের কর্তব্য হলো, আল্লাহকে ভয় করত: এ ধরণের অপ্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের হাতে তুলে না দেয়ার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা। যাতে তাদের চিন্তা-চেতনার বিকৃতি না ঘটে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَاراً وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلائِكَةٌ غِلاظٌ شِدَادٌ لا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾
অর্থঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর জাহান্নাম হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদেরকে আদশে করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে”। [সূরা তাহরীমঃ ৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে”। [বুখারী ও মুসলিম]
০৮. প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলে দীর্ঘালাপ অর্থের অপচয় করাঃ
ব্যয়বহুল মোবাইলের পরিবর্তে সাধারণ ফোনে প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হলে মোবাইল ব্যবহার না করা অথবা মোবাইলে দীর্ঘালাপ না করে সংক্ষেপে প্রয়োজন মেটানোই উচিৎ। নিশ্চয়ই এ ধরণের অপব্যবহারে অর্থের অপচয় হয়। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেনঃ
﴿وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلا تُبَذِّرْ تَبْذِيراً. إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوراً﴾
অর্থঃ “আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য দিবে এবং অভাবগ্রস্থ ও পথচারীকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ”। [সূরা ইসরাঃ ২৬-২৭]
০৯. গাড়ী চালানোবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করাঃ
নিঃসন্দেহে এতে দুর্ঘনার আশংকা থাকে। কেননা আল্লাহ তা’আলা কাউকে দু’টি অন্তর দিয়ে সৃষ্টি করেননি। গাড়ী চলন্ত অবস্থায় গন্তব্য পথে দৃষ্টি দিবে অথবা মোবাইলের কথায় মনোযোগী হবে, এক সাথে দুদিকে মনোযোগী হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে দেখা যায় অনেক সময় দূর্ঘনাও ঘটে থাকে।
বিবেকবান মানুষের কতর্ব্য হলোঃ এই ভয়ানক অবস্থা থেকে বেঁচে থাকা এবং সহযাত্রী মুসলমানদেরকে হত্যার কারণ সৃষ্টি না করা।
১০. নেয়া’মতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করাঃ
আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের অনেক নেয়ামত দান করেছেন তন্মধ্যে মোবাইল ফোন একটি বড় নে’য়ামত। এ ছাড়াও অনেক নেয়ামত রয়েছে যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। এ মর্মে এরশাদ হচ্ছেঃ
﴿وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لا تُحْصُوهَا﴾
অর্থঃ “তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না” [সূরা নাহলঃ ১৮]।
অতএব যারা এ নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন না করে অপব্যবহার করবে। আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাদের শাস্তি প্রদান করবেন। এ মর্মে আল্লাহ বলেনঃ
﴿لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ﴾
অর্থঃ “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিবো, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইবরাহীমঃ ৭]
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে সমস্থ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দিন এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত রাখেন। নিশ্চয় তিনিই সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। আমীন॥
মোবাইল ফোনের অপব্যবহার

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: