যাকাত কি ও কেন

যাকাত কাকে বলে ?
যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা অথবা বৃদ্ধি পাওয়া।
পরিভাষায় যাকাত বলা হয়,শরীয়তের নির্দেশ ও নির্ধারণ অনুযায়ী নিজের সম্পদের একাংশের স্বত্বাধিকার কোন অভাবী গরীবের প্রতি অর্পণ করা এবং এর যে কোন প্রকার মুনাফা হতে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা।

যাকাত কে যাকাত করে কেন নাম রাখা হল ?
যাকাত আদায়ের দ্বারা যাকাত দাতার মাল বৃদ্ধি পায় অথবা যাকাত দাতার মাল পবিত্র হয় এবং যাকাত দাতার অন্তর কৃপণতার কলুষ থেকে পবিত্র হয় বলে যাকাত কে যাকাত করে নাম রাখা হয়েছে। ( মোজাহেরে হক-২/৪৮৩)

কোরআনের আলোকে যাকাত
আল্লাহপাক কোরআনে পাকের যত স’ানে নামাযের কথা বলেছেন তত স’ানে যাকাত আদায়ের কথা বলেছেন। ঈমান ও নামাযের ন্যায় যাকাত ও একটি ইসলামের মৌলিক বিধান।

হাদীসের আলোকে যাকাত
হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন ইসলাম পাঁচটি স-ম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ১.কালিমায়ে শাহাদাত (ঈমান) ২.নামায কায়েম করা ৩.যাকাত আদায় করা ৪.হজ করা ৫.রমজান মাসে রোযা রাখা ( মেশকাত-১২)
উক্ত হাদীসে যাকাত কে তৃতীয় স-ম্ভ বলে রাসূল সা. ঘোষণা করেছেন। এর দ্বারা যাকাতের কি গুরুত্ব তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
এভাবে আরো অনেক হাদীস দ্বারা যাকাত ফরয হওয়া ও তা আদায়ের লাভ ও গুরুত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

যাকাত আদায় করলে লাভ কি ?
১) আল্লাহ পাকের একটি বড় হুকুম পালন করা হয়,ফলে তার প্রতি আল্লাহপাক সন’ষ্ট হন।
২) যাকাত দাতার মাল পবিত্র হয়
৩) যাকাত দাতার ধন সম্পদ আল্লাহ পাক হেফাজত করেন।
৪) যাকাত আদায়ের দ্বারা অন্তর পাক পবিত্র হয়।
৫) দুনিয়ার লোভ লালসা ও মাল দৌলতের মুহাব্বত কমে গিয়ে আল্লাহর মুহাব্বত অন্তরে প্রবেশ করে।
৬) যাকাত আদায়ের দ্বারা গরীবের সাথে মুহাব্বত সৃষ্টি হয়।
৭) যাকাত দাতার শত্রু কমে যায় এবং তার মাল দৌলতে বরকত দেখা দেয়।
৮) পরকালে বড় পুরস্কার পাওয়া যায়।

যাকাত আদায় না করার পরিণাম

কোরআনের আলোকেঃ-
যারা যাকাত আদায় করে না তাদের ব্যাপারে আল্লাহপাক বলেন,“যারা সোনা রূপা জমা করে,অথচ আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না( যাকাত আদায় করে না) তাদের কে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দিন যেই দিন দোযখের আগুনে তাদের কে গরম করা হবে। অতপর দাগ দেওয়া হবে সেগুলো দ্বারা(জমাকৃত সোনা রূপা) তাদের ললাটে,পার্শদেশে ও তাদের পৃষ্টদেশে। ( এবং বলা হবে) স্বাদ গ্রহন কর ঐ জিনিসের যা তোমরা দুনিয়াতে জমা করেছিলে। ” ( সুরা তাওবা)

হাদীসের আলোকেঃ-
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন,যাকে আল্লাহপাক সম্পদ দান করেছেন আর সে সঠিকভাবে উক্ত সম্পদের যাকাত আদায় করেনি,কিয়ামতের দিন তার সম্পদ কে তার জন্য একটি বিষাক্ত সর্পের রুপ ধারণ করাবেন। সে সর্পকে তার গলায় বেড়ী স্বরূপ করা হবে। সর্পটি নিজ মুখের দুই দিক দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার মাল,আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ। অতপর রাসূল সা. হাদীসের সমর্থনে এই আয়াতটি পাঠ করলেন“ যারা কৃপণতা করে …….( মেশকাত-১৫৫)
অপর হাদীসে আছে, হযরত বুরাইদা রা. বলেন,যে সমপ্রদায় যাকাত আদায় করে না,আল্লাহ পাক তাদের কে দূর্ভীক্ষের কবলে নিক্ষেপ করেন। অপর এক হাদীসে আছে তাদের উপর রহমতের বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। (হাকেম)

যাকাত অস্বীকার করা কেমন ?
যাকাত যেহেতু চার অকাট্য প্রমাণ তথা কোরআন হাদীস,এজমা,কিয়াসের দ্বারা সু স্পষ্টভাবে প্রমাণিত,সুতরাং যাকাত অস্বীকার করা কুফরী। এ জন্যই তো ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর রা. তাঁর খেলাফত কালে যারা যাকাত অস্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। আর যাকাতের বিধান স্বীকার করে আদায় না করা ফাসেকী ও কবীরা গুনাহ।

যাকাত দিলে সম্পদ কমে না
অনেকে মনে করে যাকাত আদায় করলে সম্পদ কমে যাবে। অথচ তা সম্পূর্ণ ভূল ধারণা। কারণ দান সদকা,যাকাত ইত্যাদি দ্বারা বাস-বে কখন ও ধন সম্পদ কমে না। যদি ও বা দেখা যায় যে সাময়িকভাবে তহবীলে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে কিন’ আল্লাহর রহমতে অন্য কোন পন’ায় সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তাছাড়া তা পরকালের একাউন্টে জমা হয় বিধায় চিন-ার কোন কারণ নেই। দুনিয়ার অল্প দিনের হায়াতের জন্য আমরা কত টাকা ব্যাংকে জমা রাখি,পরকালের জন্য কিছু জমা রাখলে অসুবিধাটা কোথায় ? তাছাড়া দেখা যায় যে যারা ঠিক ভাবে যাকাত আদায় করে না তাদের মাল দৌলতে বিপদ মুসিবত,দূর্ঘটনা লেগেই থাকে। তখন অল্প বাচাঁতে গিয়ে বেশি নষ্ট হয়ে যায়। তাই মনে করতে হবে যে যাকাত আদায় করা মানে নিজ অবশিষ্ট সম্পদের হেফাজত করা। হাদীস থেকে বুঝা যায় যে,যাকাত না দিলে সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সম্পদ কমে যাওয়ার ভয়ে যাকাত দেয়া থেকে বিরত থাকা ঈমানদারী ও চালাকির পরিচয় নয়।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
১) আযাদ হওয়া,কৃতদাসের উপর যাকাত ফরজ না।
২) আকেল তথা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া সুতরাং পাগলের উপর যাকাত ফরজ না।
৩) বালেগ হওয়া তথা নাবালেগের উপর যাকাত ফরজ না।
৪)মুসলমান হওয়া সুতরাং কাফেরের উপর যাকাত ফরজ না।
৫) নেছাবের মালিক হওয়া
৬) সেই মালের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
( হেদায়া-১৬৫)
৭)বছরের শুরু এবং শেষ প্রান্তে নেসাব পূর্ণ থাকতে হবে।
৮) এমন জিনিসের নেসাবের মালিক হতে হবে যা এক বছর পর্যন্ত বাকি থাকে।
৯) ঐ মাল হাজতে আসলিয়া তথা মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে।
১০) মাল নিজের আয়ত্বাধীন থাকতে হবে।
১১) উক্ত মালের মধ্যে অন্য কোন হকের সংমিশ্রণ না থাকতে হবে।
১২) উক্ত মালের মধ্যে তিনটি গুণের একটি গুন পাওয়া যেতে হবে। ক.মূল্যমাণ খ.বর্ধিষ্ণু গ.ব্যবসার নিয়ত
( ইলমুল ফিকাহের বরাতে মাসায়িলে রিফআত কাসেমী ১৩/৫০)

নেসাব কাকে বলে ?
নেসাব বলা হয় সম্পদের ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ কে যার উপর শরীয়ত যাকাত ফরজ করেছে।

যাকাত ফরজ হওয়ার নেসাব কি ?
রূপার হিসাবে নেসাবের পরিমাণ হচ্ছে ২০০ দিরহাম যা আমাদের যুগের হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁিদ। আর স্বর্ণের নেসাব হল সাড়ে সাত ভরি। বা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা যদি জমা থাকে এবং সে ঋণগ্রস’ না হয়।

যাকাত আদায় হওয়ার শর্ত:
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ ছাড়া ও যাকাতের মাল হকদার কে দেওয়া এবং দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়ত করা,যাকে দিবে তাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া যাকাত আদায় হওয়ার শর্ত।

যাকাত কাকে দিতে হয় ?
আল্লাহ পাক কোরআনে আট প্রকারের লোক কে যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের ছাড়া অন্য কাউকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। তারা হল-
১) মুসলমান ফকীর
২) মিসকীন যার কাছে কিছুই নেই।
৩) যাকাত আদায়কারী (যাকাত আদায় করার কাজে যে নিয়োজিত)
৪) নতুন মুসলমান যাদের মনোরঞ্জনের প্রয়োজন
৫) দাস মুক্তির জন্য
৬) ঋণগ্রস’দের ঋণপরিশোধকল্পে
৭) আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য
৮) ঐ মুসাফির যে সফরে শূণ্য হাত হয়ে গেছে।
( সূরা তাওবা)

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: