সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি


সালাতের রুকুন সমূহ
সালাতে অনেকগুলো রুকুন আছে যেগুলো আদায় করা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না।
১. সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা
অর্থাৎ-ফরয সালাত দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর স্থানে দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।
প্রমাণ, আল্ল¬াহ বলেন :
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ. (سورة البقرة : ২৩৮)
‘তোমরা আল্ল¬াহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাক।’
২. তাকবীরে ইহরাম
সালাতের প্রারম্ভে আল্ল¬াহু আকবার বলবে। প্রমাণ :
تحريمها التكبير وتحليلها التسليم. (رواه الترمذي:৩০৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাতের শুরু হল তাকবীর আর শেষ হল সালাম।’ (তিরমিযি:৩০৬)
৩. সুরা ফাতেহা পড়া
ইমাম ও মুক্তাদি সকলের জন্য প্রতি রাকা‘আতে সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
প্রমাণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
لا صلوة لمن لا يقرأ بفاتحة الكتاب. (رواه البخاري:৭১৪)
‘যে ব্যক্তি সুরা ফাতেহা পড়েনা তার সালাত হয় না।’ (বুখারী:৭১৪)
৪. রুকু করা।
৫. রুকু হতে উঠা।
৬. প্রতি রাকা‘আতে দুইবার সেজদা করা,
৭. দুই সেজদার মাঝে বসা। প্রমাণ—আল্ল¬াহর বাণী :
يا أيها الذين آمنوا اركعوا واسجدوا. (سورة الحج:৭৭)
‘হে ঈমানদারগণ ! তোমরা রুকু কর এবং সেজদা কর।’ (সুরা হজ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ثم اركع حتى تطمئن راكعاً، ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائماً، ثم اسجد حتى تطمئن ساجداً، ثم ارفع حتى تستوي جالساً، ثم اسجد حتى تطمئن ساجداً. (رواه البخاري:৭১৫)
‘তারপর ভালভাবে রুকু কর। অত:পর রুকু হতে মাথা উঠাও এবং সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াও তারপর ভালভাবে সেজদা কর। অত:পর সেজদা হতে মাথা উঠাও এবং ভালভাবে বস। তারপর পুণরায় ভালভাবে সেজদা কর।’ (বুখারী:৭১৫)
মনে রাখতে হবে, সেজদা অবশ্যই সাতটি অঙ্গের উপর করতে হবে—কপাল-নাক, দুই ক্ববজি, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের তালু।
৮. শেষ তাশাহুদ
৯. শেষ বৈঠক
রাসূলুল্ল¬াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :“যখন সে সালাত পড়বে শেষ বৈঠকে বলবে:
(التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله) )رواه البخاري:৭৮৮)
১০. সালাম অর্থাৎ ডান দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله এবং বাম দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
تحريمها التكبير وتحليلها التسليم. (رواه الترمذي :৩০৬)
‘সালাতের শুরূ হল তাকবীর আর শেষ হল সালাম।’ (তিরমিযি:৩০৬)
১১. সালাতে সকল রুকুনকে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
১২. সমস্ত রুকনগুলি ধারাবাহিকভাবে আদায় করা। প্রমাণ :
حديث أبي هريرة أن رجلاً دخل المسحد يصلي ورسول الله في ناحية المسجد، فجاء فسلم عليه فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: ارجع فصل فإنك لم تصل، قال في الثالثة فأعلمني: قال إذا قمت إلى الصلاة فأسبغ الوضوء ثم استقبل القبلة فكبر واقرأ بما تيسر معك من القرآن ثم اركع حتى تطمئن راكعا ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائماً، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا ثم ارفع حتى تستوي جالساً، ثم اسجد حتى تطمئن ساجداً ثم افعل ذلك في صلاتك كلها. (رواه البخاري:৭১৫)
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক লোক মসজিদে সালাত পড়তে প্রবেশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের এক কোণে বসে ছিলেন, তারপর লোকটি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তুমি যাও আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তোমার সালাত হয়নি। সে আবার সালাত আদায় করল এবং সালাম ফিরালো, তারপর আবারো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আবার সালাত সালাত আদায় কর কারণ, তোমার সালাত হয়নি। তিন বারের সময় লোকটি বলল, আমাকে আপনি সালাত শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন সালাত পড়তে ইচ্ছা পোষণ কর, তখন প্রথমে ভালভাবে ওযু কর এবং ক্বিবলার দিকে মুখ কর, কোরানের যেখান থেকে সহজ হয় তিলাওয়াত কর, তারপর তুমি পরিপূর্ণ রুকু কর, রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়াও, তার পর সেজদা কর, সেজদা হতে উঠে সম্পুর্ণ সোজা হয়ে বস, তারপর পরিপূর্ণভাবে সেজদা শেষ করে মাথা উঠাও এবং সোজা হয়ে দাঁড়াও, এভাবে তুমি তোমার সালাত সম্পন্ন কর।’ (বুখারী:৭১৫)


সালাতের ওয়াজিবসমূহ
সালাতের ওয়ািজব নয়টি
১. তাকবীরে এহরাম ছাড়া অন্যান্য তাকবীর বলা।
২. রুকুতে سبحان ربي العظيم বলা।
৩. ইমাম ও মুনফারেদ (একা সালাত আদায়কারী) এর জন্য রুকু হতে উঠার সময় سمع الله لمن حمده বলা।
৪. ইমাম মুক্তাদি ও একা সালাত আদায়কারীর জন্য ربنا ولك الحمد বলা।
৫. সেজদায়سبحان ربي الأعلى বলা।
৬. দুই সেজদার মাঝে رب اغفرلي বলা।
৭. প্রথম বৈঠক।
৮. প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
৯. শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া।

রুকন ও ওয়াজিবের মধ্যে প্রার্থক্য
রুকন আদায় না করলে সালাত হয় না। যদি কোন মুসাল্লি¬ ইচ্ছা করে কোন রুকন ছাড়ে তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যায়, আর অনিচ্ছায় ছাড়লে তা স্মরণ করার পর আদায় করতে হবে এবং সালাতের বাকী কার্যাদি সম্পন্ন করে সেজদা সাহু করবে। আর যদি মুসল্লি ইচ্ছা করে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে ছেড়ে দেয় সেজদা সাহুর মাধ্যমে ক্ষতি পুরণ দিবে।

সালাতের সুন্নাতসমূহ
সালাতের ওয়াজিব ও আরকান ছাড়া বাকী অন্যান্য র্কাযাবলী সুন্নাতের অর্ন্তভুক্ত।
সুন্নাত দুই প্রকার :
এক : কথ্য সুন্নাত
যেমন, সালাত শুরুর দু‘আ বা সানা পড়া
আমীন বলা। সকল সালাতে প্রথম দুই রাকা‘আতে সুরা ফাতেহার পর কুরআনের যে কোন স্থান হতে তিলাওয়াত করা, সালাতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করা, বিশেষ করে সেজদায় বেশী বেশী করে দু‘আ করা এবং শেষ বৈঠকে বেশী বেশী করে প্রার্থনা করা।
মাগরিব, এশার প্রথম দুই রাকা‘আত ফরযে আর জুম‘আ ও ঈদের সালাতে ইমামের জন্য ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া আর মুক্তাদির জন্য সব সময় ক্বিরাত নিম্নস্বরে পড়া।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: