সালাতের ফযিলত

সালাতের ফজিলত

      সালাত নুর৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক আর আলহামদুলিল−াহ পাল−াকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল−হ ও আলহামদুলিল−াহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে, সালাত নূর, সদকা দলিল ও ধৈর্য হচেছ দীপ্তি এবং কুরআন তোমার পক্ষের অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ৷’ (মুসলিম : ৩২৭)

সালাত কবিরা গুনাহ ব্যতীত সকল পাপ মোচন করে দেয়৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমা থেকে অপর জুমা মধ্যবর্তী সময়ে কৃত গুনাসমূহের কাফ্ফারা৷ যাবৎ সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়৷’ (মুসলিম : ৩৪৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর সে দৈনিক পাঁচবার তাতে গোসল করে, তবে কি তার শরীরে ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিরা বললেন, না৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্তও তদ্রুপ৷ আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা গুনাহ মোচন করে দেন৷’ (মুসলিম : ৪৯৭)

তিনি আরো একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, ‘মুসলিম বান্দা যখন আল−াহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে তখন তার গুনাসমূহ এমনভাবে ঝরে পড়ে, যেমন পড়ে যাচেছ এ গাছের পাতাসমূহ৷’ (আহমদ : ২০৫৭৬)

সালাতের গুণগত মানের ভিত্তিতেই পরকালের সফলতা ও জান্নাতের সম্মানিত স্থান নির্ধারিত হবে৷ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত৷’ (আল-মুমিন : ০১-০২) অত:পর বলেন, ‘আর যারা নিজদের সালাত হিফাজত করে তারাই হবে ওয়ারিশ- যারা ফেরদাউসের অধিকারী হবে৷ তারা সেখানে স্থায়ী হবে৷’ (আল-মুমিন : ০৯-১১)

এ সালাতের মাধ্যমেই জনৈক সাহাবি তার অপর শহিদ ভাইয়ের আগে জান্নাতে প্রবেশ করার তাওফিক লাভ করেছেন৷ সালাতের মাধ্যমেই মুমিন ব্যক্তি কখনো কখনো সিদ্দিক ও শহিদদের স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়৷

সালাত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম

       সালাত আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন৷ ইসরা ও মেরাজের সফরে তথা আসমানে সালাত ফরজ করা হয়েছে, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত সালাত আসমান ও জমিনের মাঝে সেতু বন্ধন হয়ে থাকে, দুনিয়ার পঙ্কিলতা ও পার্থিব নিচুতা থেকে রূহানি উধর্ব জগতে আরোহণের দরজা বান্দার জন্য সর্বদা উম্মুক্ত থাকে৷ যদিও আসমান দুনিয়া থেকে বিচিছন্ন কোনো জিনিস নয়৷ তবে অনেক দূরে৷ সালাত এক মেরাজ, এতে রূহসমূহ বিনীত ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দরবারে ফিরে যায়৷ সালাতের মাধ্যমে মুমিনগণ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে৷ যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নৈকট্য অর্জন করেছিলেন মেরাজের মাধ্যমে৷

সালাত বোরাক স্বরূপ৷ এর মাধ্যমে বান্দা খুব দ্রুত তার ও আল্লাহর মাঝখানের দূরত্ব অতিক্রম করে৷ সেজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্ব শেষ স্থান৷ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেজদা কর এবং নিকটবর্তী হও৷’ (আলাক : ১৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘সেজদা অবস্থায় বান্দা আল−াহর সবচেয়ে নৈকট্য অর্জন করে৷ সুতরাং সেজদায় তোমরা বেশি বেশি দুআ কর৷’ (মুসলিম : ৭৪৪)

আনাস রা. বলেন, ‘মেরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়৷ অত:পর তা কমিয়ে পাঁচ রাকাত করা হয়৷ পরে ডেকে বলা হয়, হে মুহাম্মদ, আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় না৷ তুমি এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব অর্জন করবে৷’ (আহমদ, নাসায়ি ও তিরমিজি)

সালাতের মর্যাদা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সব কিছুর মূল হচেছ ইসলাম, ইসলামের স্তম্ভ হচেছ সালাত আর তার শীর্ষ পীঠ হল জিহাদ৷’ (তিরমিজি : ৩৫৪১)

সালাত আল−াহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা অবিচল থাক, গণনা করো না৷ তোমরা কাজ করো৷ মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল সালাত, আর মুমিন ব্যতীত অন্য কেউ ওজুর যত্ন নেয় না৷’ (ইবনে মাজাহ : ২৭৩)

কিয়ামতের দিন বান্দার সর্ব প্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে৷ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে৷ যদি তার সালাত ঠিক হয় তবে তার সব আমলই ঠিক হবে৷ আর তার সালাত বিনষ্ট হলে, সব আমলই বিনষ্ট হবে৷ (তিরমিজি : ২৭৮)

কুরআনে কারিমের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে বিবিধ পদ্ধতিতে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন৷ কখনো সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন জাকাতের সঙ্গে৷ যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর৷’ (বাকারা : ১১০)

কখনো জিকিরের সঙ্গে৷ যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে যে আত্মশুদ্ধি করবে আর তার রবের নাম স্মরণ করবে অত:পর সালাত আদায় করবে৷’ (আলা : ১৪-১৫) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর৷’ (ত্বহা : ১৪)

কখনো সবরের সঙ্গে৷ যেমন ইরশাদ হয়েছে ‘আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও৷ নিশ্চয় তা বিনয়ী ছাড়া অন্যদের ওপর কঠিন৷’ (বাকারা : ৪৫)

কখনো কুরবানির সঙ্গে৷ যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত পড় ও কুরবানি কর৷’ (কাওসার : ০২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব৷ তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে৷ আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম৷’ (আনআম : ১৬৪-১৬৫)

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: