ওমরা পালনের পদ্ধতি

মক্কা মোকাররমায় আসার পর ওমরাহ আদায় করতে হবে। সুতরাং মসজিদে হারামে প্রবেশ করার পর ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদে’র দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়বে না। কারণ এ মসজিদের ‘তাহিয়্যাহ’ হল তাওয়াফ। এজন্য দুআ করার পর ওমরার তাওয়াফ করবে। যদি কোনো কারণে তাওয়াফ করা সম্ভব না হয় এবং নামাজের মাকরুহ সময়ও না হয় তাহলে তাওয়াফের পরিবর্তে তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নেবে।

তাওয়াফঃ অত:পর তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে হাজরে আসওয়াদের (কালো পাথর) দিকে এগোতে হবে এবং সেখানে পৌঁছে ইহরামের পরিহিত চাদরকে ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে চাদরের উভয় পার্শ্বকে সামনে-পিছে করে বাম কাঁধে ছেড়ে দেবে এবং ডান কাঁধ খোলা রাখবে। শরিয়তের পরিভাষায় এ কাজকে ‘ইজতিবা’ বলে।

অত:পর তাওয়াফের নিয়ত করবে এবং হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাতের তালুদ্বয়কে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে নিম্নের দুআ পাঠ করতে হবে।

‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসুলিল্লাহ’

দুআ পাঠের পর উভয় হাত ছেড়ে দেবে। অত:পর ‘ইসতিলাম’ করবে অর্থাৎ উভয় হাতকে হাজরে আসওয়াদের ওপর এমনভাবে রাখবে যেভাবে সিজদার সময় রাখা হয় এবং উভয় হাতের মাঝে মুখ রেখে আস্তে করে হাজরে আসওয়াদে চুমু খাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাজরে আসওয়াদে খুশবু লাগানো না হয় এবং ইসতিলাম করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অন্যের বা নিজের কোনো কষ্ট না হয়। ইসতিলাম করতে গিয়ে যদি নিজের বা অন্যের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে ইসতিলাম করবে না; বরং হাজরে আসওয়াদের বরাবর দাঁড়িয়ে দুর থেকে ইসতিলামের ইশারা করবে। অর্থাৎ উভয় হাতকে এভাবে উঠাবে যে, উভয় হাতের পীঠ স্বীয় চেহারার দিকে থাকবে এবং উভয় হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে এমনভাবে রাখবে, যেন মনে হয় যে উভয় হাত হাজরে আসওয়াদের ওপরই রাখা হয়েছে। এ সময় ওপরে উল্লিখিত দুআ পাঠ করবে। আর উভয় হাতকে চুমু দেবে। অত:পর ‘তালবিয়াহ’ পাঠ বন্ধ করে ডান দিকে ফিরে তাওয়াফ শুরু করবে। তাওয়াফকালীন ছোট ছোট পায়ে বীরের মতো হেলে-দুলে দ্রুত হাঁটবে। তবে দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি থেকে বিরত থাকবে। এ ধরনের হাঁটাকে ‘রমল’ বলে। এ তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে হাত উঠানো ছাড়া মনের চাহিদামত যে কোনো দুআ বা জিকির পাঠ করা সুন্নত। উল্লেখ্য, তাওয়াফের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো দুআ পাঠ করা আবশ্যক নয়। বরং মনের চাহিদামত যে কোনো দুআ বা জিকির পাঠ করলেই হবে।

বায়তুল্লাহর তৃতীয় কিনারাকে ‘রুকনে ইয়ামানী’ বলে। রুকনে ইয়ামানীর ওপর উভয় হাত পা অথবা শুধু ডান হাত ও পা রেখে অতিকন্সম করে যাবে। অত:পর হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাবে অথবা ইশারা করবে। এভাবে তাওয়াফের একটি চক্কর সম্পন্ন করবে। এরপর ‘রমলে’র সঙ্গে আরো দুই চক্কর সম্পন্ন করার পর পরবর্তী চারটি চক্করে স্বাভাবিক গতিতে তাওয়াফ করবে এবং প্রতি চক্করের পর হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করবে অথবা চুম্বন করার ইশারা করবে। যখন তাওয়াফ শেষ হয়ে যাবে তখন ‘ইজতিবা’ অর্থাৎ তাওয়াফের জন্য পরিহিত চাদরের আদল পরিবর্তন করে আগের মতো চাদরকে উভয় পার্শ্বে রেখে দেবে।

মুলতাযিম : তাওয়াফের সাত চক্কর সম্পন্ন করে মুলতাযিমে আসবে। (হাজরে আসওয়াদ ও খানায়ে কাবার দরজার মধ্যবর্তী দেয়ালকে মুলতাযিম বলে।) মুলতাযিমে আসার পর মুলতাযিম স্পর্শ করে দুআ করবে।

তাওয়াফের ওয়াজিব নামাজ : মুলতাযিমে দুআ শেষ করে ‘মাকামে ইবরাহীমে’ এসে এভাবে দাঁড়াবে যেন নিজের দাঁড়ানোর অবস্থান ও খানায়ে কাবার মধ্যবর্তী স্থানে মাকামে ইবরাহীম এসে যায়। অত:পর যদি নামাজের মাকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে তাওয়াফের ‘দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ’ আদায় করবে। আর মাকরুহ ওয়াক্ত হলে তা অতিবাহিত হওয়ার পরে আদায় করে নেবে। যদি নামাজিদের �হান সংকুলান না হয় তাহলে হারাম শরিফের যেখানেই স্থান পাওয়া যায় সেখানেই ওই নামাজ আদায় করে নেবে। অত:পর জমজম কুপের কাছে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন শ্বাসে পেট ভরে জমজমের পানি পান করবে এবং কিছু পানি নিজের শরীরের ওপর ছিটিয়ে দেবে ও বেশি বেশি দুআ পাঠ করবে।

সায়ী করার পদ্ধতি : জমজমের পানি পান করার পর পুনরায় হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে কালো পট্টির ওপর দাঁড়িয়ে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন অথবা চুম্বনের ইশারা করে ‘সায়ী’ করার উদ্দেশ্যে ‘সাফা’ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবে। সাফা পাহাড়ে আরোহণ করার পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত না উঠিয়ে সায়ী করার নিয়ত করবে। অত:পর দুআ করার জন্য উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে বেশি করে দুআ করবে। সাফা থেকে নেমে ধীরে সুস্থে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের দিকে রওনা করবে এবং জিকির ও দুআতে মশগুল থাকবে। ‘সবুজ পিলার’ পর্যন্ত পৌঁছার পর আনুমানিক ছয় হাত দুরত্ব বাকি থাকতে মধ্যম পর্যায়ের দৌড় শুরু করবে এবং দ্বিতীয় সবুজ পিলার অতিকন্সম করে ছয় হাত দুরত্বে যাওয়ার পর দৌড় বন্ধ করবে। অত:পর মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে সামান্য ডান দিকে সরে গিয়ে এমন জায়গায় দাঁড়াবে, যাতে অন্যের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয় এবং দুআ পড়তে থাকবে। এভাবে সায়ীর এক চক্কর সম্পন্ন হওয়ার পর একইভাবে আরো ছয় চক্কর সম্পন্ন করবে। মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত গিয়ে দুই চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত তিন চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে। সর্বশেষ সপ্তম চক্কর মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে শেষ হবে। সায়ী শেষ হওয়ার পর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে ‘মাতাফের’ কিনারায় অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে বা মসজিদে হারামের যেখানেই সম্ভব হয় সেখানেই দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নেবে। সায়ী-পরবর্তী এই দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়া ‘মুস্তাহাব’।

মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাঁটাঃ সায়ী সম্পন্ন হওয়ার পর নিজে বা অন্যকে দিয়ে মাথার চুল মুন্ডাবে। চুল যদি লম্বা হয় তাহলে চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলবে। তবে মাথা মুন্ডানোই উত্তম। মাথার চুল মুন্ডানো বা কাটার পর ইহরাম ছেড়ে ‘হালাল’ হয়ে যাবে। এভাবে ওমরা পালন সম্পন্ন হবে।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: