ক্বলব

ক্বলব শব্দের অর্থ অন্তর বা মন। এটি একটি মাংশের টুকরা। এর আকৃতি মসুর ডালের মত।বুদ্ধিকেন্দ্র ও জ্ঞান কেন্দ্র বুঝাতেও কখনও কখনও ক্বলব শব্দটি ব্যবহ্রত হয়। এর স্থান মানুষের বাম স্তনের ১ (এক) ইঞ্চি নীচে। অনেকে ক্বলব কে হৃদপিন্ড মনে করেন। আসলে এটা হৃদপিন্ড বা মস্তিস্ক নয় অন্য জিনিস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরাও মনে করেন অন্তর বা মন হচ্ছে মানুষের বাম স্তনের নীচে। পবিত্র কোরআনে ক্বলবের অবস্থান সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে : “বস্তুত চক্ষুতো অন্ধ হয় না কিন্তু ঐ ক্বলব অন্ধ হয় যে ক্বলব হলো বুকের মধ্যে।” (সুরা হজ্ব ৪৬)

 

রাসুল (সাঃ) ফরমান : “নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের শরীর বা আকৃতির দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের ক্বলবের (মন বা অন্তর) দিকেই তাকান।”

অতপর রাসুল (সাঃ) ক্বলবকে দেখানোর জন্য স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম শরীফ)। রসুল পাক(সাঃ) আরো বলেন : ‘‘মানুষের ক্বলব আল্লাহ পাকের অতুলনীয় ও আলৌকিক দুই আঙ্গুলের মধ্যে। তিনি অন্তর সমুহকে(ক্বলব) যেমন ইছ্ছা তেমনি করে দেন।”

আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় রসুল পাক(সাঃ) বলতেন : ‘‘হে অন্তরের(ক্বলব) আবর্তন ও বিবর্তনকারী আল্লাহ ।তুমি আমাদের ক্বলবকে তোমার আনুগত্যমুখী করে দাও।”

ক্বলব সম্পর্কে রাসুল পাক (সাঃ) আরো বলেন : “ক্বলব হলো সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গেঁর বাদশা।” ( মেরকাত শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৬২)

অর্থাৎ একটি দেশের বাদশাহ ভাল হলে দেশের প্রজারাও যেমন ভাল হতে বাধ্য হয়, তদপ্রু একটি মানুষের ক্বলব বা অন্তর ভাল হলে নিজের কাজ কমর্ও ভাল হয়ে যায়। অপর দিকে একটি মানুষের ক্বলব খারাপ হলে তার কর্মকান্ডও খারাপ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছ : ‘‘তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ পড়ে গেছে। ফলে তারা বুঝে না।” ( সুরা তওবা, আয়াত-৮৭)

পবিত্র কোরআনে অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে : “আমি তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ মেরে দিয়েছি। ফলে তারা শুনতে পায় না।” (সুরা আ’রাফ-১০০)।

পবিত্র হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে : “জেনে রেখ, মানুষের দেহের মধ্যে এক খন্ড মাংশ পিন্ড আছে, যখন তাহা সংশোধিত হয়, তখন সমগ্র দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দুষিত হয় তখন সমগ্র দেহটাইত দুষিত হয়ে যায়। মনে রেখ ওটাই ক্বলব।” ( বোখারী ও মুসলিম শরীফ)।

অন্য এক হাদিসে পাওয়া যায় : ‘‘মানুষ যখন কোন পাপ কাজ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে কালি পড়ে যায়।’’

আমরা রাসুল পাক (সাঃ) এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই বাল্য কালে উনার দুবার বুক খুলে সীনা পরিস্কার (ওপেন হার্ট সার্জারী) করা হয়েছে।

অন্য হাদিসে পাওয়া যায় : ‘‘শয়তান প্রতিটি মানুষের ক্বলবের মধ্যে হাটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে জিকির শুরু করে তখন সে পালিয়ে যায়। আবার যখন আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল হয় তখন শয়তান আবার ক্বলবে ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনা) দিতে থাকে।’’

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ক্বলব যতটুকু ভাল তার আমলও তত ভাল আর যার ক্বলব যত নষ্ট, তার আমলও তত নষ্ট বা খারাপ। পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হচ্ছে : “যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে আল্লাহ তার ক্বলবকে হেদায়াত দান করবেন”। (সুরা আন কাবুত ৯১)।

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে : ‘‘হে রাসুল, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়।যারা মুখে বলে আমরা ঈমান এনেছি, অথচ তাদের ক্বলব ঈমান আনেনি।’’ (সুরা মায়েদা-৪১) ।

অন্যত্র কালাম পাকে এরশাদ হচ্ছে : “কখনো না, বরং তারা যা কিছু (গোনাহ) উপার্জন করে তাই তাদের ক্বলবের উপর মরিচা ধরিয়ে দিচ্ছে।” ( সুরা মুতাফিফীন-১৩)।

ক্বলবের মধ্যে এই মরিচা পড়তে পড়তে ক্বলব কাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ভাল মন্দের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।রাসুল পাক (সাঃ) ফরমান : “তখন ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা” ( মুসলিম শরীফ-১ম খন্ড, ৮২ পৃঃ) ।

তওবা ও এস্তে-গফার করে নেয় তাহলে তার ক্বলব ছাফ হয়ে যায় আর যদি গুনাহ বাড়তে থাকে তাহলে দাগও বাড়তে থাকে ও অবশেষে এটা ক্বলবকে ঘিরে ফেলে” (তিরমিজি শরীফ)।

সুতরাং কলব থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে হলে কলব সংশোধন করা আবশ্যক। কলব সংশোধন হয়ে গেলে গুনাহ করতে মন চাইবে না। গুনাহর প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি হবে। গুনাহ করতে খারাপ লাগবে ও কষ্ট বোধ হবে । অপর দিকে ইসলামের দিকে চলতে মনে ভাল লাগবে ও উৎসাহ বোধ হবে।

ক্বলবের পরিচ্ছনতা বা সুস্থতাকে এরকম ভাবে বোঝানো যেতে পারে। যখন কোন ব্যক্তির জ্বর হয়, তখন তার অবস্থা হয় একজন সুস্থলোকের সম্পুর্ন বিপরীত। অর্থ্যাৎ অসুস্থ্য ব্যাক্তির ঠান্ডা লাগে, ভাল এবং সুস্বাদু খাবার ভাল লাগে না বা তিক্ত লাগে। তদ্রুপ একজন লোকের ক্বলব বা মন যদি অসুস্হ বা ময়লা হয়ে যায়। তখন তারও আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভাল লাগে না। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যে সব কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন সে সকল কাজ করতে মন চায় না। অপর দিকে যে সকল কাজ আল্লাহপাক করতে নিষেধ করেছেন, সে সকল কাজকে খুবই ভাল লাগে। অর্থাৎ একজন ময়লা বা অসুস্হ ক্বলব যুক্ত ব্যাক্তির নামাজ, রোজা, হ্জ্জ, যাকাত, দোয়া, সত্য কথা, বলা ইত্তাদি এসকল কাজ ভাল লাগেনা । অপর দিকে মিথ্যা কথা বলা, ঘুষ খাওয়া, অস্লীলতা, হিংসা ,অহংকার এসকল কাজ খূবই ভাল লাগে বা আনন্দ পায়। অপর দিকে একজন ব্যাক্তির ক্বলব বা অন্তর পরিস্কার বা সুস্হ হলে আল্লাহর আদেশ মানতে অর্থ্যাৎ নামাজ, রোজা, হ্জ্জ, যাকাত ইত্যাদি এবাদতে আনন্দ লাগে। অপর দিকে আল্লাহর নিষেধ কৃত কাজের প্রতি ঘৃনার সৃষ্টি হয় এবং ঐ সকল কাজ করতে মন চায় না।

বিষয়টাকে কোন কোন বুজুর্গব্যক্তি দুধ ও মাখনের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন সাধারন দুধ কে যে কোন তরল পদার্থের সাথে রাখলে মিশে যায়। কিন্তু দুধ কে যদি ভাল ভাবে জ্বাল দিয়ে তা থেকে মাখন বের করা হয় তবে এই মাখন কোন তরল পদার্থের সাথে মিশে যায় না। সে তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে ।তদ্রুপ একজন মুসলমান যদি সৎ কাজ, আল্লাহর এবাদৎ বন্দেগি ও সর্বাবস্হায় আল্লাহর যিকির বা স্মরনের মাধ্যমে একজন পরিস্কার বা সু্স্হ ক্বলব যুক্ত মুমিন হতে পারে, তবে সে যত প্রতিকুল অবস্থায়ই থাকুন না কেন, সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চ্ষ্টো করবে অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ ঠিকভাবে মেনে চলবে এবং গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিবে না। অথবা বিষয়টিকে শরীর চর্চার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।একজন সাধারন ব্যক্তিও যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতে ব্যয়াম করতে থাকে, তাহলে দখা যাবে যে কয়েক বৎসরের মধ্যেই সে একজন সাধারন ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশী শক্তিসালী হয়ে গড়ে উঠেছে।

তদ্রুপ একজন সাধারন মুসলমানও যদি অন্যান্য এবাদতের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন সর্বাবস্হায় আল্লাহতাআলার যিকির করতে থাকে তাহলে সেও একজন সাধারন মোসললমানের তুলনায় অনেক বেশী ইমানদার হবে। যা নাকি তার চেহারা ও আচার আচরনেও প্রকাশ পাবে । এখন কথা হচ্ছে আমাদের ক্বলব কিভাবে ময়লা ও অসুস্হ হয় এবং কি ভাবে এই ক্বলবকে পরিস্কার ও সুস্থ্য করা যায় এবং প্রকৃত ঈমানদার ও মুসলমান হওয়া যায়। এতক্ষনের আলোচনায় একথা প্রমানিত হলো যে আমদেরর ক্বলব বা মনে জং ধরতে পারে বা ময়লা হতে পারে বা অসুস্হ হতে পারে, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ না মেনে চললে এবং অ-ইসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে একবার মানুষের মন অসুস্হ ও কলুষিত হলে তখন তার আল্লাহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন সে তার নফসের খায়েস বা মনের আকাংখা পূরনের জন্যই সব কাজ করে থাকে। সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ বা বেহেস্তের আনন্দ ও দোযখের শাস্থির কথা মনে থাকে না বা বিশ্বাস করে না। তার সামনে যতই হাদিস বা কোরআনের আয়াত বা কোরআনের কথা বলা হোক না কেন কোন কথাই তার মনে দাগ কাটে না। অর্ধাৎ ধর্মের কথা শুনতে তার খারাপ লাগে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মনের অসুস্থতা ও জং বা ময়লা কিভাবে দুর করা যায় এবং এগুলো আমদের ক্বলব বা মন থেকে দুর করতে পারলে কি উপকার হবে। রাসুল পাক (সঃ) বলেন ”প্রতিটি বস্তু পরিস্কার করার জন্য একটি যন্ত্র বা রেত থাকে । তদ্রুপ মনের পরিচ্ছন্নতা আনার যন্ত্র হচ্ছে আল্লাহর জিকির বা স্বরণ”। রাসুল পাক (সঃ) বলেন “হে আল্লাহ আপনার জিকিরের দ্বারা আমাদের ক্বলবের তালা গুলো খুলে দিন।” রাসুল পাক (সাঃ) আরো বলেন “মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ বা গুনাহ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে কালো দাগ পড়ে যায়”। রাসুল পাক (সঃ) আরে বলেন “নিশ্চয়ই ক্বলব সমুহে মরিচা পড়ে। যেমন ভাবে লোহার মধ্যে পানি লাগলে মরিচা পড়ে। তখন সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) বললেন হে আল্লাহর রসুল (সাঃ) এটা পরিস্কার করার উপায় কি? জবাবে রাসুল পাক (সঃ) বললেন মৃত্যুকে খুব বেশী বেশী স্মরণ করা আর কোরান তেলওয়াত করা”।

এখন কথা হচ্ছে আমাদের ক্বলব কিভাবে ময়লা ও অসুস্হ হয় এবং কি ভাবে এই ক্বলবকে পরিস্কার ও সুস্থ্য করা যায় এবং প্রকৃত ঈমানদার ও মুসলমান হওয়া যায়। এতক্ষনের আলোচনায় একথা প্রমানিত হলো যে আমদেরর ক্বলব বা মনে জং ধরতে পারে বা ময়লা হতে পারে বা অসুস্হ হতে পারে, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ না মেনে চললে এবং অ-ইসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে একবার মানুষের মন অসুস্হ ও কলুষিত হলে তখন তার আল্লাহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন সে তার নফসের খায়েস বা মনের আকাংখা পূরনের জন্যই সব কাজ করে থাকে ।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: