বিশ্ব দরবারে প্রিয় নাম মুহাম্মাদ

নামের শুরুতে মুহম্মদ (পূর্ণ কিংবা সংক্ষিপ্ত আকারে) লেখার রীতি বাংলাদেশ এবং আমাদের পাশের দেশ ভারতে প্রচলিত। অনেকেই নামের শুরুতে মুহম্মদ লেখাকে মুসলমানিত্বের চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করেন। নামের শুরুতে মুহম্মদ লেখা বাংলাদেশ এবং ভারতে প্রচলিত একটি রীতি হলেও ধর্মীয় কোনো বিধান নয়। হিন্দু-মুসলমান পরিচয় স্পষ্ট করার জন্য নামের শুরুতে এভাবে মুহম্মদ লেখার প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নামের আগে মুহম্মদ লেখার প্রচলন সাধারণত দেখা যায় না। অন্য দেশগুলোতে মুহম্মদ নামটি ব্যবহৃত হয় একটি স্বতন্ত্র নাম হিসেবে। তবে নাম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার দিক থেকে শুধু মুসলিম বিশ্বে নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতেও নবজাতকের নাম মুহম্মদ রাখার সংখ্যা এখন ক্রমেই বাড়ছে।ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস নবজাতকের নাম সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে ২০০৯ সালে ৭ হাজার ৫১৫ শিশুর নাম রাখা হয়েছে মুহম্মদ। মুহম্মদ নামের ইংরেজি বানানের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও সংখ্যাতাত্তি্বক দিক থেকে এ নামটিরই অবস্থান প্রথম। ২০০৮ সালে এই অবস্থান ছিল তৃতীয়।

শুধু কি ব্রিটেন? আমেরিকাতেও সন্তানের নাম মুহম্মদ রাখার প্রবণতা বাড়ছে। নামের র‌্যাংকিংয়ে মুহম্মদ নামটি ক্রমেই উঠে আসছে উপরের দিকে। ১৯৯০ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৮৮ হাজার ৭৯৯টি নামের র‌্যাংকিংয়ে মুহম্মদ নামের অবস্থান ছিল ৪ হাজার ১৯৪তম। ১০ বছর পর ২০০০ সালে তা উন্নীত হয় ৬২২- এ। ২০০৪ সালের র‌্যাংকিংয়ে ৬৮১ নাম্বারে (একটু নিচে) থাকলেও ২০০৬ সালে তা আবার ৬৩৯-এ উন্নীত হয়েছে। কানাডায় ২০০৪ সালের র‌্যাংকিংয়ে মুহম্মদ নামের অবস্থান ছিল ৯২তম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরবি মুহম্মদ শব্দটির ভিন্ন বানান এবং উচ্চারণ দেখা যায়। ইরান, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান (মোহাম্মাদ), ভারত ও বাংলাদেশ (মুহাম্মাদ), উত্তর আফ্রিকা (মুহাম্মেদ), আরব বিশ্ব (মোহামেদ, মোহামাদ, মুহাম্মাদ), বসনিয়া এবং হার্জেগভিনা (মুহাম্মেদ, মুহামেদ, মেহমেদ), তুরস্ক এবং আলবেনিয়া (মুহাম্মেদ, মুহামেদ, মুহাম্মেত, মুহামেত, মেহমেত), আলজেরিয়া (মোহান্দ)। লাতিন ভাষায় মুহম্মদ শব্দটি উচ্চারণ করা হয় মাহোমেটাস, ইতালিয়ান ভাষায় মাওমেত্তো, গ্রিকে মোয়ামেথ, কাতালান এবং স্প্যানিশে মাওমা, গালিসিয়ানে মামেদ, চাইনিজ ভাষায় মুহানমোদ, রাশিয়ান ভাষায় মুখাম্মাদ অথবা মাগোমেদ, সোমালি ভাষায় মাগামেদ, সেনেগাল ও পশ্চিম আফ্রিকায় মামাদোউ এবং কাজাখ ভাষায় মাখামবেত। দ্য কলাম্বিয়া ইনসাইক্লোপিডিয়ার মতে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুহম্মদ নামের বানান এবং উচ্চারণে পার্থক্য থাকলেও মুহম্মদ নামটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি মানুষ রয়েছে, (সংখ্যাতাত্তি্বক দিক থেকে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার সমান) যাদের নাম মুহম্মদ। সম্প্রতি ব্রিটেনের নবজাতকের নামসংক্রান্ত পরিসংখ্যানে প্রকাশিত হওয়ার পর নবজাতক শিশুদের নাম মুহম্মদ রাখা প্রসঙ্গে অভিভাবকরা বলেছেন, প্রিয় নবীর (সাঃ) প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা এবং তাকে স্মরণ করাই এর অন্যতম কারণ। তাদের সবাই বিশ্বাস করেন, মুহম্মদ নামটি সুখ এবং সমৃদ্ধি আনে। আমেরিকা এবং কানাডার মুসলমানরাও এক্ষেত্রে প্রায় একই রকম ধারণা পোষণ করেন। কাফেররা প্রিয় নবীকে (সাঃ) ঠাট্টা করেছিল নির্বংশ বলে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত তারাই নির্বংশ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তার ইচ্ছায় প্রিয় নবীর (সাঃ) স্মরণ বৃদ্ধি করেছেন। তাকে করেছেন চিরঞ্জীব। আজান, নামাজ, একামতসহ মুসলমানদের সবরকম এবাদতে উচ্চারিত হয় প্রিয় নবীর (সাঃ) নাম। আর এখন দেখা যাচ্ছে শুধু এবাদতেই নয়, নাম হিসেবেও প্রিয় নবীর (সাঃ) নামটিই মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রিয়। দিনে অন্তত একবার উচ্চারিত হলেও নাম হিসেবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় প্রিয় নবীর (সাঃ) নামটিই।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: