সেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষের সভ্যতা কেবল এগিয়েছে। এই অগ্রগমন ঠিক কতটুকু তা পরিমাপ করার চেয়ে বর্তমান অগ্রগতিটুকু পর্যবেক্ষণ করাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। চাঁদে জায়গা বিক্রির তোড়জোড় নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকে সেখানে জমির জন্য বুকিং দিয়েছেন বলেও খবর বেরুচ্ছে অহরহ। মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান এবং বসবাসযোগ্য পরিবেশ খোঁজার চেষ্টায় ঘাম ঝরিয়ে চলছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী। এর বাইরে বিস্ময়কর খবর হচ্ছে_ বার্সেলোনাভিত্তিক একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান গ্যালাকটিক সুইট স্পেস রিসোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান মহাশূন্যে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের হোটেল নির্মাণ করছে। ২০১২ সালের মধ্যে এই রিসোর্টে ট্যুরিস্ট প্রেরণেরও ঘোষণা দিয়েছে তারা। অন্যদিকে রাশিয়াও আকাশে হোটেল তৈরির ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। সব ঠিক থাকলে ২০১৬ সালে চালু হবে তাদের তৈরি আকাশ হোটেল। এ ছাড়াও লাসভেগাসের আবাসন ব্যবসায়ী রবার্ট বিগেলোও তৈরি করেছেন ভাসমান হোটেল। এটিও চালু হতে যাচ্ছে শীঘ্রই।
বার্সেলোনাভিত্তিক কোম্পানি দ্য গ্যালাকটিক সুইট স্পেস রিসোর্ট এই প্রথম অতিথি পা রাখতে আসছে ২০১২ সালেই। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এ হোটেলে তিন রাত কাটাতে অতিথিদের ৩০ লাখ ইউরো খরচ হবে। এ খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আট সপ্তাহের প্রশিক্ষণও। এ হোটেলে তিন রাত থাকার সময় অতিথিরা দিনে ১৫ বার সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। আর প্রতি ৮০ মিনিটে পৃথিবীকে একবার চক্কর খাবেন তারা। এমনকি বিস্ময়কর অনেক গ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা আর ছায়াপথের কাছে পর্যবেক্ষণ তো আপনার জন্য উন্মুক্ত থাকছেই। অতিথিদের পড়তে হবে বিশেষ ভেলক্রো স্পেস স্যুট। স্পাইডারম্যানের মতো হামাগুড়ি দিয়ে দেয়াল বেয়ে তাদের চলতে হবে। পৃথিবী থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থানকারী এই স্পেস হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। এখান থেকে ঘণ্টায় ৩০ হাজার কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে ঘুরতে দেখা যাবে। মহাশূন্য হোটেলের আগেই অবশ্য মহাশূন্য পর্যটনের সূচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে তৈরি হচ্ছে স্পেসপোর্ট আমেরিকা নামের একটি স্টেশন। এখান থেকে মহাশূন্যগামী বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো পর্যটকদের নিয়ে ছেড়ে যাবে। ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্রানসনের স্পেস ট্যুর কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিক এই স্টেশনের পর্যটকদের মহাশূন্যে নিয়ে যেতে ব্যবহার করবে। এ জন্য পর্যটকপ্রতি নেওয়া হবে দুই লাখ ডলার। গ্যালাকটিক সুইট লিমিটেড যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালে। তারা পৃথিবী থেকে ৪৫০ কিলোমিটার উপরে হোটেল তৈরি করবে। এতে চারজন অতিথি ও দু'জন নভোচারী থাকতে পারবেন। হোটেলের অতিথিদের নিয়ে যাওয়া রকেট ও ক্যাপসুল হোটেলের সঙ্গেই তিন দিন সংযুক্ত থাকবে। ট্রান্সপোর্ট রকেটে স্পেস হোটেলে পেঁৗছানোর জন্য সময় লাগবে ৩৬ ঘণ্টা। এরপর রকেটের মধ্যে থাকা ক্যাপসুলে করে পেঁৗছানো হবে মূল রকেটে। আবার ক্যাপসুলে করে ফিরিয়ে আনা হবে ট্রান্সপোর্ট রকেটে, যা আবার যাত্রীকে পৃথিবীতে বহন করে আনবে। মহাশূন্য হোটেলে অতিথিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য রুশ রকেট ব্যবহার করা হবে। দু'শয়েরও বেশি মানুষ এ হোটেলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ৪৩ জন এরই মধ্যে হোটেলের কক্ষ বুকিং করে রেখেছে। আর মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য ভার্জিন গ্যালাকটিকে ৩০০ জন আগ্রহী পর্যটক টাকা জমা দিয়েছেন।
রাশিয়া ঘোষিত আকাশ হোটেল নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে 'ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন' বা 'আইএসএস'এর রাশিয়ান অংশীদার। ব্যক্তিগত পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্যই এই হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কোম্পানির ডেপুটি চিফ ডিজাইনার আলেকজান্ডার দেরেচিন বলেছেন, রাশিয়ার মালিকানাধীন 'এনার্জিয়া' সংস্থা ব্যক্তিগত মহাশূন্য স্টেশনের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে, যেখানে সাতজন পর্যন্ত মানুষ থাকতে পারে এবং যেটি হোটেল হিসেবে কাজ করবে। দেরেচিন আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মহাশূন্যযান তৈরি হচ্ছে। তাদের কোনো এক গন্তব্যের প্রয়োজন। সামপ্রতিক বছরগুলোতে রকেটে করে মহাশূন্যে ভ্রমণ নিয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা গেছে ধনকুবেরদের মধ্যে। দেরেচিন বলছেন, ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগকারীদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার জমা দিতে হচ্ছে। অরবিটাল বলেছে, এরই মধ্যে কয়েকজন ক্রেতা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের আগে এই হোটেলটির কাজ শেষ করতে পারব বলে আমরা মনে করছি না। কিন্তু আমরা এটাও মনে করছি না যে, তারও বেশি সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। মহাশূন্যে বিগেলোর
লাসভেগাসের আবাসন ব্যবসায়ী রবার্ট বিগেলো। জীবন শুরু করেছিলেন সাধারণ অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে। কৈশোরে শোনা মহাজাগতিক যানের (ইউএফও) গল্পের ভেতরে বপন করে দেন বাঁধনহারা কল্পনার। ক্রমেই তিনি পরিণত হন এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালায়। শুরু করেন মহাশূন্যে আবাস নির্মাণের প্রকল্প। এর মধ্যে অনেক দূর এগিয়েও গেছেন তিনি।
উত্তর লাসভেগাস থেকে ২০ মিনিট দূরত্বে বিগেলোর বাঁধনহারা কল্পনার উন্মোচন ঘটেছে। বিগেলো অ্যারোস্পেসের মালিকানাধীন মোজেল মরুভূমির ওই নিরিবিলি এলাকায় হচ্ছে তার আকাশকুসুম স্বপ্নের রূপায়ন। এখানে বিশাল কারখানায় চলছে মহাকাশ কেন্দ্রের বিভিন্ন উপকরণ তৈরির কাজ। মহাকাশ যান নির্মাণ উপযোগী অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি হচ্ছে এসব উপকরণ। আর তা দিয়ে বানানো হবে মহাশূন্যে ভাসমান হোটেল। স্বপ্নের ওই হোটেল হবে উচ্চ প্রযুক্তির, কম ব্যয়ী। সমুদ্র সমতল থেকে ২২৮ মাইল উপরে হবে এর অবস্থান। ইতোমধ্যে বিগেলোর পরীক্ষামূলক একাধিক মহাকাশ যান পৃথিবী থেকে শূন্যে গেছে।