রোযা

রমজান শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে ‘রাম্‌জ’ অর্থাৎ দাহন। আরবি বর্ষপঞ্জির এটি নবম মাস। রমজানের সাধনার দাহনে ভক্ত সাধকদের সব পাপ-পঙ্কিলতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়, আত্মার কালিমা দূর হয়, মুমিনের হৃদয়ে ঔজ্জ্বল্য আসে, তাই মাসটির নাম রমজান। পবিত্র কুরআনে একে কুরআন নাজিলের মাস বলা হয়েছে। ‘শাহরু রামাজানাল্লাজি উন্‌জিলা ফিহিল কুরআন।’ (বাকারাঃ ১৮৫)

মাসটির অনন্য সাধারণ ফজিলতের জন্যই নবী করিম সঃ রমজান মাস শুরুর প্রাক্কালে শাবানের শেষ তারিখে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে একটি বিশেষ ভাষণ প্রদান করেন, তাতে তিনি বলেনঃ ‘লোক সকল! একটি মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়াপাত করেছে। অতীব বরকতপূর্ণ এ মাসটি। এটা এমন একটি মাস যাতে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহতায়ালা এর দিবাভাগে রোজা ফরজ করে দিয়েছেন এবং এর রাতের এবাদতকে সওয়াবের কাজ বানিয়েছেন।’

‘যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো সৎ কর্ম (নফল) দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে যত্নবান হলো, সে যেন অপর মাসের একটি ফরজ আদায় করল। ‘আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’

‘রমজান মাস সবরের মাস আর সবরের প্রতিফল হচ্ছে জান্নাত। এটা হলো সহানুভূতি, সহমর্মিতার মাস। আর এটা এমন একটা মাস যাতে মু’মিনের রিজিক বর্ধিত করা হয়।’

‘যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার পাপমুক্তি ও দোজখ থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং এতে সে ওই রোজাদারের সমান পুণ্যের ভাগী হবে অথচ রোজাদারের পুণ্য তাতে একটুও কমবে না।’

তখন সাহাবিরা আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের সবার তো রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই? তখন রাসূলুল্লাহ সঃ বললেনঃ ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে একটি মাত্র খেজুরদানা বা এক ঢোক পানি অথবা একটু দুধ মিশ্রিত পানি দ্বারা ইফতার করাবে, সে-ও এ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে।’ ‘এটা এমন একটা মাস, যার প্রথমাংশ রহমত, মধ্যমাংশ মাগফিরাত এবং শেষাংশ দোজখের আগুন থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে তার ক্রীতদাসের কার্যভার লাঘব করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন এবং দোজখ থেকে মুক্তিদান করবেন।’

‘এ মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো। দু’টি এমন যা দিয়ে তোমরা তোমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করবে এবং দু’টি কাজ এমন যা ছাড়া তোমাদের গত্যন্তর নেই।’
‘তোমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজ দু’টি হলোঃ কালেমা পাঠ এবং বেশি বেশি এস্তেগফার করা (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ ও আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি পাঠ করা) আর যে দু’টি কাজ ব্যতীত তোমাদের গত্যন্তর নেই তা হলোঃ আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের এবং দোজখ থেকে আশ্রয়ের প্রার্থনা করা। (দোয়ার ভাষাঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্‌আলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার)

‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানি পান করাবে তাকে আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন আমার হাউজ থেকে এমন পানি পান করাবেন যে, জান্নাতে প্রবেশের আগে আর তার তৃষ্ণা পাবে না। বায়হাকি থেকে মিশকাত শরিফে উদ্ধৃত এ ভাষণটি উদ্ধৃত করে শায়খুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়া রঃ বলেনঃ ‘শাবান মাসের শেষ তারিখে নবী করিম সঃ বিশেষভাবে এ ওয়াজটি করেন এবং লোকজনকে পূর্বাহ্নেই সতর্ক করে দেন, যাতে করে রমজানের একটি মুহূর্তও কারো গাফেল অবস্থায় না কাটে।’

**************************
মুফতী মুফীযুর রাহমান
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: