হজ্জ ও সমকালিন চিন্তাভাবনা

হজ পালন ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। যে মুসলমানের কাছে পবিত্র মক্কা শরিফে যাতায়াতের সম্বল আছে তার জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। হজের ব্যাপারে হাদিসে (বুখারি ও মুসলিম) বলা হয়েছে ক. ‘মকবুল হজ অর্থাৎ সঠিক হজের প্রতিদান হলো জান্নাত’ এবং খ. সঠিকভাবে তা পালন করতে পারলে হজকারী হয়ে যাবে নিষ্পাপ যেমন শিশু জন্ম নেয় নিষ্পাপ হয়ে। তাই প্রতিটি মুসলমানের অভীষ্ট লক্ষ্য ও চূড়ান্ত প্রত্যাশাই হলো নিষ্পাপ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এমনই নিষ্পাপ হওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই মনে হয় হজের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাস্তবে আমরা অনেকে হজের হাকিকত অর্থাৎ মর্মার্থ সম্বন্ধে অনুধাবনে অজ্ঞ। তাই দেখা যায় অনেকে একবার নয়, অনেকবার নফল হজ করছেন। কিন্তু অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অর্থ ব্যয় না করে কেন তিনি বারবার নফল হজ করছেন তা কেবল আল্লাহই জানেন। হজ পালনকালে ‘তওবাহে নাসুহা’ করার পর তো আমাদের অবশিষ্ট জীবনে নিষ্পাপই হয়ে থাকার কথা। তা না হলে হজের গুরুত্ব কি আর তেমন থাকে? আজকাল অনেকের মাঝে বারবার হজ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন প্রতি বছর কিছু পাপাচার করলে তার বিপরীতে প্রতি বছর হজ বা মাঝে মধ্যে ওমরা পালন করলে পাপমুক্ত হওয়া যায়। এ ধারণা স্রেফ আত্মপ্রবঞ্চনার শামিল নয় কি? তবে যদি কেউ ফরজ হজ করে পাপমুক্ত হয়ে তার পুণ্যের রেকর্ড আরো সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে নফল হজ করেন তবে তিনি তা করতে পারেন।

হজ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে হজ পালন করা উচিত। সমাজে কেউ কেউ ছেলেমেয়েকে বিয়ে না দিয়ে বা অন্য অবাঞ্ছিত কারণ দেখিয়ে হজ পালনে বিলম্ব করে থাকেন। এটা একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ যেকোনো সময় মৃতুø ঘটে যেতে পারে অথবা শারীরিক কারণে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। তাই যথাসময়ে হজ পালন করা সমীচীন।

ঘন ঘন নফল হজ না করে বরং হজের সে টাকা যদি দরিদ্র আত্মীয় ও প্রতিবেশীর অভাব মোচনে বা সমাজকল্যাণে ব্যয় করা হয় তাহলে তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। দানের জন্য আল্লাহ অনেক তাকিদ দিয়েছেন। আল্লাহর কথামতো সে দান ৭০০ গুণ বা তদূর্ধ্ব গুণে তিনি বাড়িয়েও দিতে পারেন।

হজের সময় আরাফার ময়দানে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো থেকে আগত মুসলিম উম্মাহর এ মহাসম্মেলনে যে খুৎবা দেয়া হয় তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে ভাষণ অধিকাংশ মানুষই শুনতে পান না। যেহেতু এ বিশাল প্রান্তরে সর্বত্র মাইক কভারেজ দেয়া এখনো সম্ভব হয়নি। ভাষণটি আরবিতে হওয়ায় তা উপস্থিত অন্য ভাষাভাষী মুসলিম ভাইবোনদের বোধগম্য হয় না। রাসূলুল্লাহ সাঃ কতৃêক বিদায় হজে দেয়া ভাষণটি এবং আরাফার ময়দানে দেয়া খুৎবাটি যদি মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন ভাষায় আগেই অনুবাদ করে একটি পুস্তিকায় প্রতিটি হজ সমাপনকারীকে মক্কা-মদীনা থেকে বিদায়কালে প্লেনে অথবা অন্য যানে ওঠার সময় দিয়ে দেয়া হয় তাহলে প্রতিটি মুসলিম ভাই তা অবহিত হয়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে তা প্রয়োগ করে উপকৃত হতে পারেন। এ ব্যাপারে সৌদি সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি সৌদি সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারেন।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: