হজ করার নিয়ম

 

সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ তামাত্তো হজ করে থাকেন। তামাত্তো হজে সর্বপ্রথম কাজ উমরাহর জন্য এহরাম বাঁধা যা ফরজ। গোসল অথবা অজু সেরে মিফাত অতিক্রম করার আগেই সেলাইবিহীন একটি চাদর পরুন, অপর একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। এরপর অবস্থানুযায়ী দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এবার এহরামের নিয়ত করুন এবং আওয়াজ করে অন্তত একবার (তিন বার হলে ভালো) তালবিয়া পাঠ করুন। নিয়ম অনুযায়ী ওমরার কাজ শেষ হওয়ার পর এহরামের কাপড় খুলে সেলাই কাপড় পরে স্বাভাবিক চলাফেরা করবেন।

হজের প্রস্তুতিঃ ৮ জিলহজ থেকে হজের অনুষ্ঠান শুরুর জন্য অপেক্ষা করবেন। সাথে সাথে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থেকে সুষ্ঠু ও নির্ভুল হজ সম্পাদন করার জন্য আল্লাহর কাছে দেয়া প্রার্থনা করতে থাকবেন।

হজের দিনগুলোতে আপনার করণীয়
হজের মূল দিবসগুলো হচ্ছে ৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত।

হজের এহরাম (ফরজ)- ৮ জিলহজ তারিখে হজের নিয়ত করে এহরাম বেঁধে সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমুখে রওনা হবেন তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে।

মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)- ৮ জিলহজ জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে জোহরের নামাজ পড়বেন। অতঃপর আসর, মাগরিব ও এশা এবং ৯ জিলহজ ফজর নামাজ আদায় করবেন। মিনাতে অবস্থানকালে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করবেন।

উকুফে আরাফা (ফরজ)- ৯ জিলহজ মিনা থেকে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের জন্য রওনা হবেন। রাসূল সাঃ বলেছেন, ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ।’ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান অবশ্যই করবেন। জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের প্রথম ওয়াক্তে এক আজান ও দু’ইকামাতে কসর করে একত্রে পড়তে হয়। সেখানে অবস্থানের সময় বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে যাতে অবস্থান সঠিক হয়। কারণ আরাফাতসংলগ্ন ‘আরানা উপত্যকা’ অবস্থিত। সেখানে ‘মসজিদে নামিরা’ অবস্থিত। হাজীদের ভুল করে ওই উপত্যকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। যা হোক সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় রাতযাপনের জন্য রওনা হবেন।
মুজদালিফায় অবস্থানঃ সূর্যাস্তের পর আরাফা বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুজদালিফার উদ্দেশে চলতে থাকুন। মুজদালিফায় পৌঁছে এক আজানে ও দু’ইকামতে দু’ওয়াক্ত নামাজ কসর আদায় করবেন (কসর মাগরিবের হবে না, শুধু এশার হবে)। মুজদালিফায় অবস্থানকালে জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য ক্ষুদ্রাকারের ৪৯ বা ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করবেন। ফজরের নামাজ আদায় করে প্রতুøষে আকাশ ফর্সা হতে থাকলে মিনার দিকে রওনা হবেন।

কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)- ১০ জিলহজ বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পূর্বপর্যন্ত। কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব এবং নিক্ষেপের সময় ‘তাকবির’ বলবেন। নিক্ষেপ করার সময় স্তম্ভের গায়ে নয়, বৃত্তের মধ্যে পড়লে হবে। সতর্কতার সাথে করবেন কারণ ওই সময় প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।

কোরবানি করা (ওয়াজিব)- ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে কোরবানি করবেন। অতঃপর মাথা মুণ্ডন করে অথবা চুল ছেঁটে গোসল সেরে এহরাম কাপড় খুলে স্বাভাবিক কাপড় পরবেন। খেয়াল রাখতে হবে যেন কঙ্কর মারা, চুলছাঁটা বা মাথা মুণ্ডন করা এবং কোরবানি করার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। তা না হলে দম বা কাফফারা দিয়ে হজ শুদ্ধ করে নিতে হবে।

তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)- ১০ জিলহজ কঙ্কর মারা শেষে তাওয়াফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মিনা থেকে ‘খানায়ে কাবা’ যেতে হবে। ওই দিন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারতের কাজ সারতে হবে। তা না হলে ১২ জিলহজ তারিখের পরে তাওয়াফ করে দম দিতে হবে। অবশ্য মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণে না করতে পারলে পবিত্র হওয়ার পর তা সমাধা করবেন।

কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)- ১১ জিলহজ দুপুরের পর (সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে) প্রথমে ছোট জামারায়, তারপর মধ্যম জামারায় এবং বড় জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।

১২ জিলহজ আগের দিনের মতোই করবেন। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একই বিধান। তবে মহিলাদের রাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েজ। নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। বিনা ওজরে অন্য কারো মাধ্যমে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েজ নয়। নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। বিনা ওজরে অন্য কারো মাধ্যমে কঙ্কর নিক্ষেপ জায়েজ নেই।
কোরবানিঃ কিরান হজ ও তামাত্তো হজ পালনকারীদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। হজকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কোরবানির উদ্দেশ্যে উট, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল যেকোনো একটি বা একাধিক জবাই করে যে রক্ত প্রবাহ করেন, তাকে দম বলে। অবশ্য সৌদি কতৃêপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অনুমোদিত ব্যাংকের বুথ স্থাপন করেছে। সেখানে টাকা জমা দিয়ে কুপন সংগ্রহ করলেই দম বা কোরবানির ব্যবস্থা হয়ে যায়। সর্বশেষে বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা শরিফ থেকে বিদায় নেবেন। যারা মদিনাতে যাননি, তারা মসজিদে নববী জিয়ারতের উদ্দেশ্য মদিনা যাবেন।

মিনা ত্যাগঃ মিনায় থাকতে না চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে বা পরে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা ভালো।

বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)- মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) করুন। এতে ইজতেবা, রমল, সায়ি নেই। মাকামে ইবরাহিমে দু’রাকাত নামাজ পড়ে মুলতাজাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন। জমজমের পানি পান করেও দোয়া করুন।

তাওয়াফে জিয়ারতের পর কোনো নফল তাওয়াফ করে থাকলেও বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মহিলারা শারীরিক কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে কোনো অসুবিধা নেই; এজন্য কোনো দম বা কাফফারাও নেই।
 
 

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: