হিটলারের শেষ দিন

     অস্ট্রিয়ার ব্যাভেরিয়ার মাঝামাঝি ব্রানাউ নগরীতে ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল হিটলার এক দরিদ্র পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। হিটলার ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন একগুঁয়ে, জেদী ও রগচটা। সামান্য ব্যাপারেই তিনি রেগে উঠতেন এবং অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে তর্ক করতেন। পড়াশোনার চেয়ে তিনি ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করতেন। প্রথম জীবনে স্কুলে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত তার পড়াশোনা করা হয়নি। মা মারা গেলে সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন করে হিটলার চলে যান ভিয়েনায়। সেখানে তিনি প্রথমে মজুরের কাজ শুরু করেন। ভিয়েনায় থাকাকালীন তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে ওঠে ইহুদিবিদ্বেষ। ১৯১২ সালে তিনি ভিয়েনা ছেড়ে চলে আসেন মিউনিখে। এখানে অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে দু’বছর পার করলেন। ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তিনি যোগ দেন লেবার পার্টিতে। এক বছরের মধ্যেই তিনি এ পার্টির প্রধান হন। পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। পরবর্তী সময়ে এ দলকেই বলা হতো ন্যাৎসী পার্টি। ধীরে ধীরে এ পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে যেন আর কোনও রাজনৈতিক দল না থাকে। কিন্তু তার এ ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে এক বছর বন্দি জীবনযাপন করেন। জেল থেকে বের হয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি পুরো জার্মানি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এসময় তিনি জার্মানদের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষের বীজ রোপণ করেন। হিটলার চেয়েছিলেন এভাবে দেশ থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করবেন। ১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি নতুন আইন চালু করলেন। আইনের মাধ্যমে তিনি দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করলেন। এ আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান। হিটলার তার সব ক্ষমতা নিয়োগ করলেন সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করে। এদিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক দেশ দখল করতে থাকলেন হিটলার। তিন বছরে হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ শুরু করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মলিত হয়ে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে। নিশ্চিত পরাজয়ের কথা জেনে হিটলার ক্রমশই সঙ্গী-সাথীদের কাছ থেকে দূরে সরতে থাকেন। সবার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তখন তিনি বেশিরভাগ সময় বাংকারে কাটাতেন। সেখান থেকেই তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এ সময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রেমিকা ইভা ব্রাউন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও হিটলারের কাছ থেকে এক মুহূর্তের জন্য দূরে সরেননি। ১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা স্টেইনের সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়। হিটলার তখন বুঝতে পারেন তার স্বপ্ন চিরদিনের মতোই শেষ। বার্লিনের শেষপ্রান্তে রুশ বাহিনীর কামানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হিটলার তার সঙ্গীনী ইভাকে বার্লিন ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইভা তা গ্রহণ করেননি। ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বাঙ্কারের মধ্যেই ছোটখাটো আয়োজনের মধ্য দিয়ে হিটলার ইভাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর হিটলার তার সঙ্গীদের সঙ্গে শ্যাম্পেন পান করলেন। তারপর তিনি দুটি চিঠি লিখলেন। একটিতে সবকিছুর জন্য ইহুদিদের দায়ী করলেন এবং অন্যটিতে নিজের সব সম্পত্তি পার্টিকে দান করে দিলেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সাল। বার্নিলের চারদিক অবরোধ করে ফেলেছে লালফৌজ। হিটলার বুঝতে পারেন যে কোনও মুহূর্তে তিনি লালফৌজ বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করে এলেন। এ সময় তিনি তার সহযোগীদের বললেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ানো হয় যে তার দেহের কোনও অংশের চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই গুলির শব্দ শোনা গেল। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করলেন। আর এর আগেই তার সদ্য বিবাহিত বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। চারদিক থেকে এসে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে এল। সেই অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হল। গোটা বিশ্ব ধ্বংসের খেলায় মেতে অবশেষে নিজেই ধ্বংস হলেন হিটলার।

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: