দেনমহর

বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা বা স্থাবর সম্পত্তির আকারে যে মাল প্রদান করে সেই মালকে মহর বলে। দেনমহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। আল্লাহ্‌ তা'আলা সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে পুরুষকে বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেনঃ
 

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً

তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদেরকে তাদের মহর প্রদান কর। (সূরা নিসা,৪/৪)

মহর সর্বনিম্ন পরিমাণ দশ দিরহাম। মহানবী (সা.) বলেনঃ
দশ দিরহামের কম মহর হতে পারে না। (দারা কুত্‌নী, সূত্রঃ হিদায়া, ২য় খন্ড, পৃ. ৩০৪)

মহরের সর্বোচ্চ পরিমানের সীমা নির্ধারিত নেই। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
 

وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا

তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহনের ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাকো তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহন করো না। (সূরা নিসা,৪/২০)

মহর দুই শ্রেনীতে বিভক্ত। যথাঃ
১. মহরে মুসাম্মা (নির্ধারিত),
২. মহরে মিসাল।

বিবাহ সম্পাদনকালে বর-কনের পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত মহরকে 'মহরে মুসাম্মা' বলে। বিবাহের সময় মহরের উল্লেখ না থাকলে অথবা মহর আদৌ নির্ধারন করা না হয়ে থাকলে সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীর পিতৃকূলের অন্যান্য মহিলার মহরের পরিমাণ বিবেচনায় রেখে তার জন্য যে পরিমান মহর নির্ধারন করা হয় তাকে 'মহরে মিসাল' বলে।

পরিশোধের সময়সীমার দিক থেকে 'মহরে মুসাম্মা' দুইভাগে বিভক্তঃ
১. মহরে মু'আজ্জাল অর্থাৎ বিবাহের সময় যে মহর নগদ আদায় করা হয় তাকে 'মহরে মু'আজ্জাল' বলে।
২. মহরে মু'য়াজ্জাল অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা তাদের কোন একজনের মৃত্যুর কারনে যে মহর পরিশোধ তৎক্ষনাৎ বাধ্যতামূলক হয় তাকে 'মহরে মু'য়াজ্জাল' বলে।

মহর কখন পরিশোধযোগ্য হবে সে সম্পর্কে বিবাহকালে কিছু উল্লেখ্য না করা হলে সম্পূর্ণ মহর দাবী করা মাত্র আদায়যোগ্য হবে। (বাদায়েঊস্‌ সানায়ে (মিসরীয় সং), ২য় খন্ড, পৃ. ২৮৮)

বিবাহ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে নির্জনে মিলিত হওয়ার পূর্বে তালাক সংঘটিত হলে এবং মহর পূর্বে নির্ধারিত হয়ে থাকলে স্ত্রী অর্ধেক মহর প্রাপ্য হবে। যেমন আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
 

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ

তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দাও, অথচ তাদের মহর ধার্য করেছ, তাহলে যা তোমরা ধার্য করেছ তার অর্ধেক। (সূরা বাকারা,২/২৩৭)

উপরোক্ত অবস্থায় মহর ধার্য হয়ে না থাকলে স্ত্রী মহর প্রাপ্য হবে না। বরং সে মুতয়া স্বরূপ পরিধেয় বস্ত্র পাবে। যেমন আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
 

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ

যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করেছ এবং তাদের জন্য মহর ধার্য করেছ, তাদেরকে তালাক দিলে তোমাদের কন পাপ নাই। তমতা তাদেরকে মাতা(কিছু উপহার সামগ্রী) প্রদান করবে। (সূরা বাকারা,২/২৩৬)

এখানে 'নির্জনে মিলন' (খালওয়াতে সহীহা) বলতে স্বামী ও স্ত্রীর এমন স্থানে একত্র হওয়া বুঝায় যেখানে তাদের সহবাসে লিপ্ত হতে দৈহিক, প্রাকৃতিক ও আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান নেই।

মহর মূলত দেনা স্বরূপ, তা অনাদায়ের ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর এই অধিকার রহিত হয় না। সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে নিজের মহর উসূল করে নিতে পারে। এমনকি সে তা আদায় করার জন্য স্বামীর পরিত্যক্ত সসম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারে। মৃতের ওয়ারিসগণের উপর নিজ নিজ অংশ মুতাবিক মহহরের দায় বর্তাবে।
 

Prayer Times For 6 Million Cities Worldwide
Country: